হেফাজতে ইসলাম সরকারবিরোধী নয়, আবার সরকারদলীয়ও নয় : বাবুনগরী

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: মদিনা সনদের আলোকে দেশ পরিচালনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবনির্বাচিত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এদেশ মদিনা সনদে চলবে। অন্য কোনো সনদে চলবে না। তাই মদিনা সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কাজ শক্তভাবে দমন করতে হবে।

ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় মদদে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্যোগে শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নগরের রেজিস্টারি মাঠে আয়োজিত গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনায়েদ বাবুনগরী এসব কথা বলেন।

‘হেফাজত বাঘও নয়, সিংহও নয়’ মন্তব্য করে বাবুনগরী বলেন, ‘সংগঠনটি (হেফাজত) সরকারবিরোধী নয়, আবার সরকারদলীয়ও নয়। নামাজ, রোজা, হজ-জাকাত হলো হেফাজতের কর্মসূচি। হেফাজত বাংলাদেশে নামাজ কায়েম করতে চায়। যারা ইসলামের শত্রু, রাসুলের দুশমন; নাস্তিক-মুরতাদদের কবর রচনার জন্য হেফাজতে ইসলামের অভ্যুদয়।’

বাবুনগরী বলেন, বিশ্বের দুশ কোটি মুসলমানের ভালোবাসার প্রতীক রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকার ব্যঙ্গ করে, কটাক্ষ করে মুসলমানদের কলিজায় আগুন লাগিয়েছে। রাসুলের অপমানের মোকাবিলায় রক্ত সাগর ভাসিয়ে দেয়া হবে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আল্লামা জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয় বিকেল সোয়া ৫টায়।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, নায়েবে আমির অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, উপদেষ্টা আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক আকুনী, নায়েবে আমির আল্লামা নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন।

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাবেশের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ। বক্তব্য রাখেন সমাবেশের অন্য আহ্বায়ক মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী জাতীয় সংসদে অবিলম্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অন্যথায় হেফাজত কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বানও জানান তিনি।

কাসেমী আরও বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর শান-মান রক্ষায় মুসলিম জাতি রক্ত দিতে প্রস্তুত। যতদিন আল্লাহর হাবিবের শানে বেয়াদবি করা হবে, ততদিন আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাব।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো স্থানে নবীর অবমাননা সহ্য করা হবে না। বাংলাদেশে নবীর দুশমনদের প্রতিহত করা হবে।’

হেফাজতের উপদেষ্টা আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা বিশ্ব মুসলমানের হৃদয়ে যেভাবে রয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নবীর সুন্নাতসমূহ পালন করতে হবে।’

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ফ্রান্স ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে দেশটির দূতাবাস থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আল্লামা জিয়া উদ্দীন বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় জমায়েত হয়েছি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আজকের সমাবেশে লাখো মানুষের জমায়েত প্রমাণ করে রাসুলের (সা.)-এর জন্য সিলেটবাসী যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’

সমাবেশ উপলক্ষে জোহর নামাজের পর থেকে লোকজন রেজিস্টারি মাঠে আসতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাঠ ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায়ও মানুষের ঢল দেখা যায়।

সমাবেশে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস, সিলেটে হোটেলসমূহে মদের অনুমোদন বাতিল ও মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি বন্ধ এবং রায়হান হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি সম্বলিত তিন দফা দাবি পেশ করা হয়।

সমাবেশ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিলেট মহানগর পুলিশ। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের বিপুলসংখ্যক সদস্য সমাবেশস্থল ও আশপাশে নিয়োজিত ছিলেন।