বয়স্ক-বিবাহিতদের নিয়েই হচ্ছে ছাত্রদলের জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: ছাত্রদলে বয়স্ক ও বিবাহিতরা থাকবে না- এমন নিয়ম বেঁধে দিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড, যা মেনে দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত বছর কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। পরে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

অথচ এখন নিজেদের করা নিয়ম নিজেরাই ভাঙতে শুরু করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ১১৭টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে অন্তত ৮৫টির আংশিক কমিটি রয়েছে। এর অধিকাংশেরই মেয়াদ শেষ, আবার কমিটিতে যারা আছেন, তারা অনেকেই বিবাহিত ও চল্লিশোর্ধ্ব।

এখন তাদের রেখেই এসব জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। এ নিয়ে খোদ সংগঠনের মধ্যে বিতর্ক উঠেছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠিও দিয়েছেন কয়েকটি জেলার নেতারা।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, বেশির ভাগ জেলায় আংশিক কমিটি আছে, যা আগের নিয়মে গত কমিটি (রাজিব- আকরাম) ঘোষণা করে। যেহেতু বর্তমান নিয়মে আংশিক কমিটিগুলো হয়নি, তাই পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে আমরা বিবাহিতদের অ্যালাউ করছি।

তাদের জেলা কমিটিতে সম্মানজনক একটা সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক পদ দিয়ে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছি। কারণ তারা আমাদের কর্মী। যেহেতু দীর্ঘদিন ছাত্রদলের কমিটি হয়নি, আমরা যদি কমিটি ভেঙে নতুন নিয়মে করি, তাহলে মাঝখানের জেনারেশন কোথায় যাবে। অন্তত পদ দিলে পরে যুবদল বা স্বেচ্ছাসেবক দলে যেতে চাইলে বলতে পারবে আমি ছাত্রদলের পদে ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, সারা দেশের উপজেলা কমিটি করা এখন আমাদের প্রধান টার্গেট। উপজেলা কমিটি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে যেসব জেলা কমিটি আংশিক আছে, তা পূর্ণাঙ্গ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ করার ১৫ থেকে ২০ দিন পরে তা ভেঙে নতুনভাবে কমিটি করব। নতুন করে যে কমিটি হবে তাতে শতভাগ অবিবাহিত থাকবে।

যদিও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সহসভাপতি জানান, ১৮ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের নীতিনির্ধারণী কমিটির কার্যনির্বাহীর এক সভায় বিভিন্ন ইউনিট কমিটির ক্রাইটেরিয়া বা পদপ্রার্থিতার বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়।

যার মধ্যে অন্যতম ছিল সাংগঠনিক জেলা ও জেলা সমমান শাখার (জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়) পদপ্রত্যাশী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি পাসের সন কোনোভাবেই ২০০৩ সালের আগে হতে পারবে না।

সাংগঠনিক উপজেলা ও উপজেলা সমমান শাখার (উপজেলা, থানা, পৌর ও কলেজ) পদপ্রত্যাশী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি পাসের সন কোনোভাবেই ২০০৫ সালের আগে হতে পারবে না। ছাত্রী নেত্রীদের বৈবাহিক অবস্থা শিথিলযোগ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, এ নিয়ে কিছুদিন আগে সংগঠনের একটি বৈঠক হয়। যেখানে বিবাহিত ও বয়স্কদের রেখে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির ‘টপ ফাইভের’ মধ্যে শুধু দু’জনের মত ছিল। বাকি তিনজন এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। এমনকি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অধিকাংশই এর বিরুদ্ধে ছিলেন।

কিন্তু ওই দুই নেতা একরকম জোর করে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করান। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও বোঝাতে তারা সক্ষম হন। ওই নেতা আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের পর প্রথম গত শনিবার বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ শাখার ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়, যেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন বিবাহিত। অথচ এই শাখার আংশিক কমিটির দুই বছরের মেয়াদ শেষ হবে ১৮ জুলাই।

এদিকে কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন গত কমিটিতে থাকা অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। যারা বিবাহিত এবং বয়সের কারণে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাননি। গত কমিটির কেন্দ্রীয় এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, যে কারণে আমরা বাদ পড়লাম, সে নিয়ম জেলা কমিটির ক্ষেত্রে বহাল না থাকলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হল। সব চেয়ে বড় কথা- এ সিদ্ধান্তের কারণে ছাত্রদল সম্পর্কে একটি খারাপ ‘মেসেজ’ যাবে কর্মীদের কাছে। আমার ধারণা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান কমিটি। তিনি আরও বলেন, জেলার শাখার ‘টপ ফাইভ’ নেতাদের ভোটে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এখন পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে নেতৃত্বে রেখে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার হচ্ছে, যা সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর হবে।

বিবাহিতদের নেতৃত্বে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে কেন্দ্রে ঢাকা জেলা শাখার দুই নেতার চিঠি : চল্লিশোর্ধ্ব ও বিবাহিতদের নেতৃত্বে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছে ঢাকা জেলা শাখার দুই নেতা।

শনিবার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেয়া চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকেও। ঢাকা জেলা শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান রনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসাঈন মুন্সী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জুয়েলের নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি হয় ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ২ বছর মেয়াদি এই কমিটি এখন পার করছে ৪ বছর ৫ মাস। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত। একজনের বয়স ৩৬, অন্য জনের ৪১।

চিঠিতে তারা বলেন, ছাত্রদলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা ছাত্রদলের নেতাকর্মী-সমর্থককে উদ্বুদ্ধ করেছে। যেমন- বিবাহিত ও মাদক গ্রহণ করে কেউই ছাত্রদলের যে কোনো ইউনিট কমিটির শীর্ষ পদে আসীন হতে পারবেন না।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ঢাকা জেলায় তা বাস্তবায়নে সুপরিকল্পিতভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংসদকে অন্ধকারে রেখে একটি গোষ্ঠী ঢাকা জেলা ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি মাসুম-জুয়েলকে বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পাঁয়তারা করছে। এজন্য অনৈতিকভাবে অর্থ সরবরাহের খবর রটেছে। চিঠিতে তারা আরও বলেন, যদি মাসুম-জুয়েলকে বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়, তাহলে সরকার সমর্থক লিয়াজোঁ পক্ষই লাভবান হবে, যা ঢাকা জেলার তৃণমূল ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কোনোভাবে মেনে নেবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমি বিবাহিত না। আর যদি নিষ্ক্রিয়ই থাকতাম, তাহলে আমার বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা থাকত না। তবে সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত বলে জানান তিনি।