বরগুনায় স্কুলশিক্ষিকার ছাগল জবাই করে ভাগভাগী করলেন যুবলীগ নেতা!

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরগুনার বামনায় এক স্কুলশিক্ষিকার ছাগল চুরির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে ছাগলটি চুরি করে নিয়ে উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের নিজ বাসার ছাদে ছাগলটি জবাই করে ভাগবাটোয়ারা করে নেন যুবলীগ নেতা মো. সাজ্জাদ হোসেন মর্তুজা। এমন অভিযোগ করেন ছাগলের মালিক স্কুলশিক্ষিকা কাজী শাহানা ফেরদৌসী শিবলী। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে বামনা থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বামনা থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মাসুম হাওলাদার (২০) নামে একজনকে আটক করে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন মর্তুজা বামনা উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া অপর ২ আসামি কলাগাছিয়া গ্রামের স্বপন হাওলাদারের ছেলে মাসুম হাওলাদার (২০) এবং নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন (২০)।

এদিকে অভিযোগটি তুলে নিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ওই শিক্ষিকাকে পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরে তাদের চাপে বুধবার সকালে তিনি অভিযোগটি থানা থেকে তুলে নিতে বাধ্য হন বলে দাবি তার।

পরে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা ঘটনাটি সালিশ-মীমাংসার জন্য আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে বামনা থানা পুলিশ আটককৃত মো. মাসুম হাওলাদারকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়।

ছাগলের মালিক কাজী শাহানা ফেরদৌসী শিবলী একই গ্রামের সৈয়দ মুশফিকুল মান্নান কুতুবুল ইসলাম আকিলের স্ত্রী এবং বামনা আসমাতুন্নেসা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা স্কুলের শিক্ষিকা।

তিনি বলেন- আমার ছোট ছোট দুই শিশুসন্তানের প্রিয় ছাগলটি আসামিরা নিয়ে জবাই করেছে। আমার সন্তানরা ছাগলটির জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েছে। আমি থানায় অভিযোগ দেয়ার পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

সোহরাব হোসেন সগির নামে এক নেতা থানায় বসে আমাকে আমার সংসার ভাঙার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়; আমি অভিযোগ না তুলে নিলে তারা আমাকে আর আমার স্বামীর সংসার করতে দিবে না। এসব মানসিক চাপে আমাকে অভিযোগটি তুলতে বাধ্য করে।

তবে আমি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অনুরোধ করি মামলা তুলে নিলেও জনতার মাঝে এ ঘটনার বিচার চাই। পরে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিলে আমি সেটা মেনে নেই।
তবে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) মো. আব্দুল মান্নান ফরাজী সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলশিক্ষিকা কাজী শাহানা ফেরদৌসী ছাগল চুরির একটি অভিযোগ বামনা থানায় দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক এক আসামিকে আটক করি। পরে বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধাসহ স্থানীয় নেতার আশ্বাসে অভিযোগটি প্রত্যাহার করেন ওই স্কুলশিক্ষিকা।

বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালিশ ব্যবস্থায় বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দেন। পরে মুচলেকা রেখে ওই আটককৃতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তবুও বামনার সার্বিক সম্মানের জন্য আমি আগামী শুক্রবার বালিকা বিদ্যালয়ে ছাগল চুরির ঘটনার মীমাংসা করার চেষ্টা করব। অন্যথায় ছাগলটির মালিক পরে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’