চরফ্যাশনে যানজট ও খানাখন্দে দূর্ভোগে পৌরসভাবাসী

শেয়ার করুনঃ

এম নোমান চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি :: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার পৌর সড়কসহ মহাসড়কের ভাঙ্গা ও খানাখন্দে বেহাল অবস্থায় প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। ভাঙ্গা সড়কে অসচেতনতায় অনুমোদনবিহীন মোটর সাইকেল, নসিমন করিমন ময়ুরি,পঙ্খিরাজ এবং অটোবোরাক, ট্রাক লড়ি ও টেম্পুসহ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে গত ৪দিনে ৩ জন ও ১৬ দিনে নারী শিশুসহ মোট ৫জন নিহত এবং অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

পৌর বাসিন্দ জনৈক ব্যাক্তি বলেন, প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার জন্যই পৌর বাজারে প্রতিদিন জানঝট লেগেই থাকে,ঠিক মতো রাস্তা দিয়ে হাটা যায়না। জ্যামে পড়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে চাকুরিজীবীসহ রোগী ও দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটক এবং পথযাত্রীরা পড়ছেন নানান দূর্ভোগে। ভাঙ্গা সড়ক ও ড্রাইভারদের অসেচতনতায় গত ২৮ ডিসেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় শশিভূষণ পানিরকল এলাকায় বাস ও অটোবোরাক দূর্ঘটনায় উপজেলার চর কলমী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা বেলালের স্ত্রী তানিয়া বেগম (৩০) ও মালিহা (৩) নামের মা ও শিশু নিহত হয়। এছাড়াও চলতি মাসে বিআর ডিবি সড়কে গেল রবিবার দুপুরে টেম্পু ও মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় লালমোহন উপজেলার চর উমেদ ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশ্রাফুল ইসলাম টুলু (৪২), সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় কাশেমগঞ্জ সড়কে প্রধাণ শিক্ষক চরফ্যাশন এওয়াজুর ইউনিয়নের বাসীন্দা মাওলানা এরশাদ আলী (৫৮) ও শশিভূষণ থানা এলাকায় মঙ্গলবার রাত ৯টায় শশিভূষণ বাজারের প্রবেশ পথ সড়কে প্রাণ হারান তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সেলিম (৪০)। এসব দূর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পৌর সড়কসহ মহাসড়কের শতশত ভাঙ্গা গর্তে ঘটছে এসব দূর্ঘটনা। এমনটাই দাবি করছেন সচেতন মহল। উপজেলার আমিনাবাদ স্কুল সংলগ্ন সড়কের একপাশ ভেঙ্গে খালের ভেতরে দেবে গেছে। এছাড়াও একাধীক ইউনিয়নের সড়ক সংলগ্ন পুকুর কিংবা খালের মধ্যে দেবে যেতেও দেখা যায় এসব সড়ক। দির্ঘদিনের এ সমস্যায় বেগ পেতে হচ্ছে জনসাধারণসহ দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। উপজেলার শশিভূষণ,দক্ষিণ ও উত্তর আইচা,আমিনাবাদ,ওসমানগঞ্জসহ উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের ভাঙ্গাসড়ক সংস্কার ও জানজটমুক্ত পৌর বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দায়ি করছেন এসব সড়ক সংলগ্ন বাসীন্দা ও পথযাত্রীরা।

এছাড়াও পৌরসভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সড়ক,মান্দারতলী খালপাড় সড়ক,চামেলী পাড়া, জালাল মুন্সি চৌমোহনী,আসলামপুর-পৌরসভা সীমানা সড়ক, হরিবাড়ী থেকে মোল্লাবাড়ি পর্যন্ত সড়কসহ আরও একাধীক সড়কে ভাঙ্গা গর্ত এবং সড়কের পাশ ভেঙ্গে নালার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সড়কেই ঢালাই ও পিচ উঠে মাটি সরে গেছে। এছাড়াও পৌর বাজার জনতারোডের লঞ্চঘাট সড়কটির এক পাশ খালের ভেতর দেবে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।

স্থানীয় পৌর বাসিন্দা জাবের আল সাবহা সহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, হাসপাতাল সড়কের প্রবেশ পথেই রয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। এসব সড়কে ঘটছে প্রতিদিন দূর্ঘটনা। হাসপাতাল সড়কটি দিয়ে যানবাহনে করে রোগী চলাচল ও প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে প্রসূতি রোগীর ভোগান্তীসহ নানান বেগ পেতে হচ্ছে পৌরবাসীদের। এছাড়াও মাত্র ২২ হাতের প্রসস্থ এই সড়কটিতে ট্রাক লড়ি দিয়েও প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের মালামাল লোড আনলোড এবং ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের শতশত হোন্ডা ও রিকশা পার্কিং করে রাখায় প্রতিদিন জানজট লেগেই থাকে। ফলে প্রসূতী ও জরুরী রোগীদের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতে ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে। শুধু হাসপাতাল সড়কই নয় পৌর এলাকার প্রায় ৫০কিলোমিটার পাকা সড়কই রয়েছে বেহাল অবস্থায়।

চরফ্যাশন পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌর সভার ৯০কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাকা সড়ক। উপকূলীয় শহর অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫০কোটি টাকার একটি প্রকল্প রয়েছে। ওই বরাদ্দটি পাস হলেই বাকি কাঁচা সড়কগুলোও পাকা এবং ভাঙ্গা সড়কগুলোকে সংস্কার করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র শ্রী বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ। ভোলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, ভোলা টু চরফ্যাশন-বাবুরহাট পর্যন্ত আঞ্চলীক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৮৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাস হয়েছে। ঠিকাদার সিলেক্ট হলেই অতিদ্রæত সড়ক নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের একাধীক অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছেনা এসব অবৈধ হোন্ডা বোরাক ও ফুটপাত দখলকারীদের। এছাড়াও বাজার ইজারার নামে কতিপয় চক্র পৌর সদর সড়কসহ মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারঘাটে দোকানপাট বসিয়ে নিরবে চাঁদা তুলছে। সংশ্লীষ্ট মহলের সহযোগীতা ছাড়া এদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।