নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় মামলা না নেয়ায় থানা ঘেরাও করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিসিক শিল্প নগরীর ফরচুন সু কোম্পানীর মালিক মিজানুর রহমান এবং তার দুই ভাই শফিক ও রবিউলসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে এজাহার দাখিল হলে পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে।
মামলা গ্রহণ করার পরপরই নেতাকর্মীরা থানা এলাকা ত্যাগ করে। এদিকে এ ঘটনায় রুপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে শ্রমিকলীগ নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে এ ঘটনায় বরিশাল নদী বন্দর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চের যাত্রাও বন্ধ রাখা হয়েছে। মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস জানান, বাস শ্রমিক নেতাকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
নদী বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে আজ রাত ৯টার দিকে অ্যাডভেঞ্চার ৯, পারাবত ১০, ১২, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ১১ ও সুরভী ৯ লঞ্চ যাত্রীদের নিয়ে রওয়ানা দেওয়ার কথা ছিল। এসব লঞ্চে রাজধানীমুখি কয়েক হাজার যাত্রী রয়েছে।
বরিশাল সদর নৌ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লঞ্চগুলো যাত্রীদের নিয়েই ঘাটে অবস্থান করছে। তবে কি কারণে লঞ্চগুলো সময় হওয়ার পরেও ঘাট ত্যাগ করছে না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কেউ কিছু জানায়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদ রানা। অপরদিকে মামলা গ্রহণ ও মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পেয়ে মামলার বিবাদী ফরচুন সু কোম্পানীর মালিক মিজান দ্রুত গাড়িযোগে বিসিক এলাকা ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, বরিশাল বিসিক এলাকায় আওয়ামীলীগ কর্মীকে মারধরের ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ এবং অভিযুক্তকে আটক না করার কারনে সন্ধ্যার পর থেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানা এলাকায় জড়ো হতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে কাউনিয়া থানাকে ঘেরাও করে রাখে। বরিশালের এক ছাত্রলীগ নেতা সোস্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে থানা ঘেরাওয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সোহাগ দীর্ঘদিন যাবত ইট, বালু, রড সিমেন্টের ব্যবসা করে। ইতিপূর্বে ফরচুন সু কোম্পানীর মালিক মিজানকে বাকিতে রড সিমেন্ট ও বালু বিক্রি করে।
কিন্তু একাধিকবার পাওনা টাকা চাইলেও তা পরিশোধ করেনি মিজান। উল্টো সোহাগকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখায়। আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা সোহাগ বাসায় যাচ্ছিল পথিমধ্যে বিবাদী মিজান তার পথরোধ করে এবং তার ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুনের হুমকি দেয়।
এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় মিজান ও তার দুই সহযোগী সন্ত্রাসী শফিক ও রবিউল দেশীয় অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতারি মারধর করে। সোহাগের ডাকচিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় মিজান ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা।
পরে স্থানীয়রা আহত সোহাগকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি করেন। এ ঘটনায় সোহাগের পরিবার কাউনিয়া থানায় মামলা দিতে গেলে থানা পুলিশ মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যার পর নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের আ’লীগ নেতাকর্মীরা থানা এলাকায় জড়ো হয় এবং মামলা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। এর পরপরই নেতাকর্মীরা থানা এলাকা ত্যাগ করে।
উল্লেখ্য ফরচুন সু’র মালিক মিজান সব সময় মটর সাইকেল বহর নিয়ে মন্ত্রী এমপিদের মতো চলাফেরা করতেন বলে জানা যায়।