ঝালকাঠিতে মাত্রাতিরিক্ত ফিড খাইয়ে মোটাতাজাকরণ, স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে গরু

শেয়ার করুনঃ

ঝালকাঠিতে ঘাস না দিয়ে বাজারের ফিড খাওয়ানোয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে প্রাণীরা। ফলে সহজেই স্ট্রোক করে প্রাণ হারাচ্ছে এই প্রাণীগুলো। গরুর ক্ষুরা চাল রোগের পাশাপাশি স্ট্রোক রোগ নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে খামারি এবং কৃষকরা।

রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া ইউপি সদস্য মো. কুদ্দুস হোসেন ফ্রিজিয়ান জাতের কয়েকটি দুগ্ধ গাভী পালন করছেন। গোয়ালে রেখে বাজারের ফিডে ভরসা করেই বড় করা হয়েছে এই গাভীগুলোকে। তারমধ্যে দেড় মাস পূর্বে একটি গাভি বাচ্চা দেয়। দুধ উৎপাদন হতো প্রায় সাত লিটার।

বুধবার (০৩ মার্চ) সকালে ৭টার দিকে দুধ দোহন করার সময়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় গাভীটির এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। মুঠোফোনে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা অনুযায়ী, শরীর গরম করতে ছ্যাকা দেয়া শুরু হয়।

ইতোমধ্যে গাভিটি শুয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে ফেনা তুলে মারা যায়। পরে মাটিতে গর্ত করে গাভীটিকে পুতে রাখা হয়। গাভিটির বাজারমূল্য ছিল দেড় লক্ষাধিক টাকা।

শুধু নারিকেল বাড়িয়ায়ই না, রাজাপুর মেডিকেল মোড় সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার (০২ মার্চ) সকালেও এভাবে আরেকটি গাভী মারা যায়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় হিট স্ট্রোক বা অজ্ঞাত কারণে গরু মরে যাবার খবর পাওয়া যায়।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভেটেরেনারি সার্জন (ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) ডা. মো. সরোয়ার হাসান বলেন, ‘গবাদি পশুকে ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ সবসময়ই দেই। ঘাসের বিকল্প খাবার হিসেবে ফিড খাওয়াতে বলি। কিন্তু অনেক খামারি বা কৃষক আছেন যারা ফিডের ওপরেই পুরো ভরসা করে গবাদিপশু পালন করেন। এতে পশুর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হয়ে দ্রুত মোটা হয়ে গেলেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়’।

শীতে এ প্রতিকূল আবহাওয়ায় বুঝা না গেলেও গরমের সময়ে বেশি দেখা যায়। গরমে উচ্চ রক্তচাপ শুরু হলে মানুষের মতোই গরুও স্ট্রোক করে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং মারা যায়।

ডা. মো. সরোয়ার হাসান পরামর্শ জানিয়ে বলেন, ‘গরুর হিট স্ট্রোক সাধারণত গরমকালে হয়ে থাকে। এই গরমকালে গরুকে রোদের মধ্যে বেঁধে রাখলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তাই কোনভাবেই গরুকে খোলা মাঠে বেঁধে রাখা যাবে না’।

তীব্র গরমে গরুকে ঠান্ডা পানি পান করানো গেলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং গরুর হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকগুণে কমে যায়। এছাড়া শরীরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে সম্ভব হলে গরুর মাথায় ঠান্ডা বরফ দিয়ে ঘষে দিতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।