পটুয়াখালীতে টাকা না দিলে কাজ করেন না ইউপি চেয়ারম্যান!

শেয়ার করুনঃ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: দেশের অসহায়, গরিব ও আশ্রয়হীনদের কথা চিন্তা করে সরকার বিনামূল্যে বিধবা, বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা সেবা দিচ্ছে। আশ্রয়হীনদের দিচ্ছে ঘর। কিন্তু এসব সেবা পেতে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দিতে হচ্ছে টাকা। চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যানের এমন কৃতকর্মে অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ও ইউপি সদস্যারা।

এসব হয়রানির থেকে রক্ষা পেতে ইউপি সদস্য জামাল হাওলাদার জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালকের কাছে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩২৫টি ভিজিডির নাম আসে। নামপ্রতি চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা। এলজিএসপি প্রকল্পের বরাদ্ধ থেকে গভীর নলকূপের প্রতিটিতে সাধারণ মানুষকে গুনতে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া নলকূপের প্লাটফর্ম তৈরি করতে ছয় হাজার টাকা বরাদ্ধ থাকলেও তার সমুদয় টাকা চলে যায় চেয়ারম্যানের পকেটে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এলজিএসপির অর্থায়নে পাঁচটি নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দুটি স্থাপন না করে পুরো টাকাই ইউপি সদস্য জামালের স্বাক্ষর জাল করে চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর দেওয়ার নাম করে ২০-৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন তিনি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমে তিন হাজার এবং ভাতা হাতে পাওয়ার পর দুই হাজার পাঁচশ টাকা দিতে হয় চেয়ারম্যানকে। ৪০ দিনের সব প্রকল্পেও ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে।

এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় পাঁচ ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আকন, আমিনুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, লিয়ন হাওলাদার ও জামাল হাওলাদারকে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পিটিয়ে আহত করে তার লোকজন।

ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের বারেকের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘নলকূপের জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। নলকূপ দিলেও আরও ৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় নলকূপের প্লাটফর্ম করে দেয়নি। বরং আমাদের ৫ হাজার টাকার পাইপও কেনা লাগছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজিতা গ্রামের এক দুঃস্থ বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা লোন করে চেয়ারম্যানকে ঘরের জন্য দিয়েছি।’

৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আকন বলেন, ‘চেয়ারম্যান মনির তালুকদার পুরো মাধবখালী ইউনিয়নকে নিজের জমিদারি মনে করেন। জমিদারি প্রথার মতোই চলছে তার কার্যক্রম। অনিয়ম ছাড়া কোনও নিয়ম নেই এখানে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ইউপি সদস্য বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কারণে সাধারণ মানুষ আমাদের লাঞ্ছিত করে। কোনও সেবার জন্য ইউনিয়ান পরিষদে গেলে টাকা ছাড়া চেয়ারম্যানের সেবা মেলে না। যখন ওই সব মানুষের বাড়ির সামনে দিয়ে আমরা যাই, তারা আমাদের বদনাম করে। কিছুই বলার থাকে না। চেয়ারম্যান তো কখনও মাঠে আসে না। আমাদের তো এই গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাড়ি যেতে হয়।’

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ইউপি সদদ্যের অপকর্ম ঢাকতে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছে। আমি কোনও টাকা পয়সা নেইনি। আর এ অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।’

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’