দুর্নীতির আতুর ঘর গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতালের মধ্যে পোড়ানো হয় সরকারি ঔষধ!

শেয়ার করুনঃ

শামীম আহমেদ :: অনিয়ম ও দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিনত হয়েছে গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ঔষধ সাধারণ রোগিদের মাঝে বিতরণ না করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের মধ্যে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজেদুল হক কাওছারের উপস্থিতিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ পোড়ানোর পাশাপাশি যেসব ঔষধে মেয়াদ রয়েছে সেসব ঔষধ পোড়ানোর চিত্র। সাধারণ রোগিদের মাঝে ঔষধগুলো বিতরণ না করে পুড়িয়ে ফেলায় জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোঃ আমরুল্লাহ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজেদুল হক কাওছারের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও রহস্যজনক কারনে বহাল তবিয়তে থাকায় অনিয়মের আতুর ঘর হয়ে উঠছে জেলা উত্তর জনপদের গুরুত্বপূর্ন এ হাসপাতালটি।

সরকারি ঔষধ জঙ্গলে : নিয়ম বর্হিভূতভাবে সরকারি ঔষধ পোড়ানোর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই বস্তা ভর্তি বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাওয়া গেছে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের জঙ্গলে। এছাড়াও হাসপাতালের মধ্যে একটি আবাসিক কোয়ার্টারের সামনে থেকে বস্তা ভর্তি ঔষধ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ইনজেকশন, স্যালাইনসহ বিভিন্ন প্রকার দামী ঔষধ রয়েছে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ : হাসপাতাল কর্মকর্তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করে ঘটনার পরপরই রাতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভকালে স্থানীয়রা জানান, সাধারণ রোগিদের মাঝে ঔষধগুলো বিতরণ না করায় ঔষধের মেয়াদ উর্র্ত্তীণ হয়েছে। তারা আরও জানান, স্থানীয় গুটি কয়েক ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বর্তমান হাসপাতাল প্রধান ডাঃ সাইয়্যেদ আমরুল্লাহ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজেদুল হক কাওছার জনগুরুত্বপূর্ন হাসপাতাল কে একটি সিন্ডিকেটে রুপান্তর করেছেন। ফলে আগের মত এখন আর রোগী আসেনা হাসপাতালটিতে।

জিম্মি গণমাধ্যম কর্মীরা : হাসপাতালের পিছনে গোপনে ঔষধ পোড়ানো শুরু হলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যায় স্থানীয় পেশাজীবি গণমাধ্যম কর্মীরা। এসময় হাসপাতালের গেটে তালা লটকিয়ে এবং ভিতরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি জেলার চৌকস জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে অবহিত করা হয়। খবরপেয়ে উপজেলা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, সহকর্মী সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মেলে গণমাধ্যম কর্মীদের।

ঔষধ জব্দ : হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টার ও হাসপাতালের আবাসিক এলাকা থেকে বেশ কিছু ঔষধ জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ঔষধগুলো জব্দ করা হয়। এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম, থানার এসআই কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

উধোর পিন্ডি বুধোর ঘারে : ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে স্টোর কিপার ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন হাসপাতাল প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এ যেন উধোর পিন্ডি বুধোর ঘারে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা।

হাসপাতালের গাছ বিক্রি : কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিগত বছরের জুলাই মাসে হাসপাতালের কমপক্ষে ১০টি গাছ বিক্রি করে দেয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার কাওছার। এছাড়াও লকডাউনের মধ্যে হাসপাতালের পুকুরে টিকেট দিয়ে কর্তৃপক্ষ না জানিয়ে মাছ বিক্রি করে দেয়া হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে রাতের আধারে ভুরঘাটা এলাকার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের কাছে হাসপাতালের ভাঙ্গারী লোহা বিক্রি করে দেয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার।

হাসপাতাল প্রধান কে ভৎসনা : গত ১২ জানুয়ারি বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ও সুধীজনদের সাথে সুকান্ত বাবু মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা করেন। মতবিনিময় সভায় উপজেলা হাসপাতালের প্রধান ডাঃ সাইয়্যেদ মোঃ আমরুল্লাহকে চরম ভৎসনা করেন স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। সেসময় ওই জনপ্রতিনিধিরা জানান, করোনাকালে উপজেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষের পাশে থাকলেও নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলো হাসপাতাল প্রধান।

সুষ্ঠ তদন্তের আশ্বাস : ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষী বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস। এসময় তিনি (ইউএনও) জানান, বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে ঘটনার সাথে কোন কর্মকর্তার যোগসূত্র পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন জানান, গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কাওছার হোসেন মেয়াদ উর্ত্তীণ ঔষধ বিনষ্ট করার বিষয়ে তাকে জানালে তিনি (সিভিল সার্জন) ডাঃ কাওছার কে দাপ্তরিক নিয়মে মেয়াদ উর্ত্তীণ ঔষধ বিনষ্ট করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরও মেয়াদ উর্ত্তীণ ঔষধ বিনষ্ট করায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এবিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসপূর্বে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর উপ-স্বাস্থ কমিউনিটি হাসপতালে সাধারণ রোগিদের মাঝে ঔষধ বিতরণ না করে হাসপাতালের পাশে ঔষধের ভাগার তৈরি করেন উপ-স্বাস্থ কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। সে ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও উপজেলা হাসপতাল থেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রহস্যজনক কারনে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ নেয়া হয়নি।’