বাউফল থানার ওসির সঙ্গে আসামীদের সেলফি, এলাকাজুড়ে তোলপাড়

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ ছিনতাই, মাদক ও মারামারি মামলার আসামীদের সঙ্গে সেলফি ও ফটো সেশন করে বিতর্কিত হলেন বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। আসামীরা রবিবার রাতে নিজের ফেসবুক আইডি থেকেই ওসির সঙ্গে ওই সেলফি ও ফটো সেশনের ছবি পোস্ট করার সাথে সাথে তোলপাড় শুরু হয়।

জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় বাউফল থানায় ৭ মার্চ আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ওই দিন বিকালে থানা চত্বরে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যার পর গানবাজনার আয়োজন করা হয়। ওই আনন্দ উৎসব চলাকালে বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও দ্রুত বিচার আইনের মামলার (মামলার নম্বর ২৯ তারিখ ২৫/০২/২০২১) ১ নম্বর আসামী ফয়েজ বিশ্বাস, ২ নম্বর আসামী মামুন হাওলাদার, ৩ নম্বর আসামী কবির মৃধা, ৯ নম্বর আসামী হাসান দফাদার ও ১০ নম্বর আসামী আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন সেলফি ও ফটো সেশন করেছেন এবং তা ওই রাতে নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ওসির সঙ্গে সেলফি ও ফটো সেশন করা ওইসব আসামীরাসহ ১৮-২০ লোক নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামে মিজান মৃধার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় মিজান মৃধা বাদি হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী আদালতে দ্রুত বিচার আইনে একটি নালিশি পিটিশন দায়ের করলে আদালত এ ঘটনায় মামলা নেয়ার জন্য বাউফল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থানায় এ মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

বাদী মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত মামলার কোন আসামী আদালত থেকে জামিন নেয়নি। বরং আসামীরা এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। সেই আসামীদের সাথে থানার ওসির সেলফি ও ফটো সেশন করায় তিনি ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পরেছেন। তিনি ওই মামলা সুষ্ঠ তদন্ত নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন। ওসির সঙ্গে আসামীদের সেলফি ও ফটো সেশনের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই সব ব্যক্তিদের নামে ছিনতাই, মাদক ও মারামারির মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকায় তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত।

উল্লেখ, মোস্তাফিজুর রহমান বাউফল থানায় ওসি হিসাবে যোগদানের পর গত ২০১৯ সালের ২৪ মে ডাকবাংলোর সামনের সড়কে তার চোখের সামনে একটি তোড়ন নির্মাণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তাপস নামের এক যুবলীগ নেতা খুন হলেও ওই সময় তিনি খুনিকে পাকরাও করেননি। একই বছর ২ আগস্ট কেশবপুর ইউনিয়নে সরকারী দলের এ পক্ষের হামলা অপর পক্ষের ইউনিয়ন যুব লীগের সহ সভাপতি রুমন তালুকদার ও তার চাচাতো ভাই যুবলীগ কর্মী ইশাত তালুকদার খুন হন। এ ঘটনার আগে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। উভয় পক্ষ ওই সময় থানায় অভিযোগ করলেও ওসি কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তখন ওসি পদক্ষেপ নিলেও জোড়া খুনের ঘটনা নাও ঘটতে পারতো।

এ ছাড়াও চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারী দলের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে। ওই সময় ওসিসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ছাড়াও এ উপজেলায় চুরি, ডাকাতি ঘটনা ঘটলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি থানায় মামলা করতে গেলে তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। জিডি করতে হলেও তাকে টাকিা দিতে হয়। সচেতন মহলের অেিযাগ তার অযোগ্যতার কারণেই বাউফলে দিন দিন আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে।

এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,‘ আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। অনেকেই তার সাথে ছবি ও সেলফি তুলেছেন। তাদের মধ্যে কে আসামী আর কে আসামী না তা আমি চিনতে পারিনি।’