বরিশালে দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধীর বিয়েতে উৎসুক জনতার ভিড়

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ভিন্ন রকমের বিয়ের আয়োজন করেন নগরের পলাশপুর গ্রচ্ছগ্রামে স্থানীয় লোকজন। এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেকে বাড়ি নিয়ে এলেন ঘোড়ার গাড়িতে। বর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কালাম ব্যাপারী ও কনে সুমা আক্তার শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী।

সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামে ১ নম্বর লেনে গিয়ে দেখা যায়, বর-কনেকে ঘিরে আছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা নানাভাবে আনন্দ-উৎসব করছেন। দুপুরে ছিল বর-কনের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। এতে এলাকার লোকেরা চাঁদা তুলে অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সবকিছু করেন। আনন্দে মাতেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ, শিশুরাও।

বিয়ের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য এলাকার লোকজন চাঁদা তোলেন। প্রায় ২৫ হাজার টাকা তুলে বর-কনের পোশাক, আপ্যায়ন ব্যয় থেকে শুরু করে সবকিছু করেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেনও ছিলেন এই উদ্যোগে। তিনি বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে একটি হুইলচেয়ার দেন।

এই বিয়ের উদ্যোক্তাদের হিসাবে ছিলেন সুমন সরদার। তিনি নিউজজিকে বলেন, রোববার বিকেলে আমরা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে কনের বাড়িতে যাই। তাদের বিবাহ নিবন্ধন হয়। সেখানে ফিরনি-মিষ্টি দিয়ে উপস্থিত লোকজনকে আপ্যায়ন শেষে ঘোড়ার গাড়িতে করে কনেকে বরের বাড়িতে তুলে আনেন তারা। বর-কনের বাড়ি পাশাপাশি হলেও ঘোড়ার গাড়িতে বর-কনেকে পুরো এলাকা ঘোরানো হয়। এ সময় উৎসুক লোকজন রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি আরো বলেন, বর কালামের গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জের কালীগঞ্জ গ্রামে। মা–বাবা নেই। তারা দুই ভাই। কালাম ছোট। বড় ভাই আবদুস সালামও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। শ্রমিকের কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে পলাশপুরের গুচ্ছগ্রামে ছোট্ট একটি খুপরি ভাড়া করে থাকেন। আর কনে সুমার বাবা বাবুল পালওয়ান। তিনি রিকশা চালান। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার চলছে টেনেটুনে। নিউজজি প্রতিবেদকের কথা হয় বর কালামের সাথে বোঝা যাচ্ছিল বিয়েতে খুব খুশি তিনি কনের পাশে বর কালামও ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল।

বিয়ের পর অনুভূতি জানতে চাইলে নিউজজিকে কালাম বলেন, আগে তো এলহা আছিলাম এহন ঘরে বউ আইছে, ভালোই লাগে, আবার চিন্তাও লাগে। সরকারি কয়ডা টাহা ভাতা পাই। হেইয়্যা দিয়া সোংসার চালামু ক্যামনে? যদি কেউ আমারে একটা কামের (কাজ) ব্যবস্থা করতো, তয় নিজের সোংসার নিজেই চালাইতে পারতাম। এই ধরেন কিছু মালামাল দেলে বইয়্যা হেইগুলা বেইচ্চা জীবনডা চইল্লা যাইতো।

নববধূ সুমা স্বামীর পাশে বসে আছেন। কিন্তু তিনি স্বামীর এই আকুতি শুনতে পান না। কিন্তু স্বামীর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকানো সুমার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা তখন অনেকটাই মলিন। বোঝা গেল শ্রবণশক্তি না থাকলেও তার স্বামী যে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা বলছেন, তা ঠিকই ইন্দ্রিয় তাকে বুঝতে সহায়তা করছে।