আমতলীতে ডায়রিয়ায় এক নারীর মৃত্যু, লবনাক্ত পানির প্রভাবে বাড়ছে প্রকোপ

শেয়ার করুনঃ

রেজাউল করিম,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি :: ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে বিউটি বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই নারীকে স্বজনরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। ঘটনা ঘটেছে সোমবার সকালে আমতলী উপজেলার খেকুয়ানী গুচ্ছ গ্রামে।

লবনাক্ত পানির প্রভাবে ডায়রিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরেছে। গত সাত দিনে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। রোগীদের সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিসশীম খেতে হচ্ছে। আসন সংকুলন না হওয়ায় রোগীদের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছে। উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের পায়না নদী সংলগ্ন এলাকায় কয়েক হাজার রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানাগেছে। হাসপাতালে রয়েছে স্যালাইন সংঙ্কট। ঔষধ কোম্পানীগুলো স্যালাইন সরবরাহ না করায় উপজেলায় স্যালাইনের চরম সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় অসাধু ঔষুধ স্যালাইন মজুদ করে কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে চরা মুল্যে স্যালাইন বিক্রি করছে। ৭০ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। দ্রুত স্যালাইন সরবরাহ না করলে ভয়াবহ সংঙ্কটের মুখে পড়বে উপজেলার মানুষ।

আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে,গত ৭ দিনে তিন’শতাধিক মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪৫-৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২ টার পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮৫ রোগী। চিকিৎসক ও নার্সদের রোগীদের সামাল দিতে হিমশীম খেতে হচ্ছে বলে জানান ডাঃ এমদাদুল হক চৌধুরী। আসন না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে উপজেলার খেকুয়ানী গুচ্ছ গ্রামের বিউটি বেগম নামের এক নারী ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পায়রা নদীতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী সংলগ্ন গ্রাম বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, ঘোপখালী, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, খাদ্যগুদাম এলাকা, শ্মশান ঘাট, ওয়াবদা অফিস এলাকা, বৈঠাকাটা, পশ্চিম ঘটখালী, আংগুলকাটা, গুলিশাখালী, নাইয়াপাড়া, হরিদ্রাবাড়িয়া ও কলাগাছিয়া এলাকায় ডায়রিয়া প্রকোপ বেশী দেখা যাচ্ছে। সরকারীভাবে আক্রান্তের সংখ্যা তিন’শতাধিক হলেও বে-সরকারী ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না এসে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার কম আক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী চলে যাচ্ছেন।

অপরদিকে হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংঙ্কট রয়েছে। এ মাসের শুরুতে ডায়রিয়া সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার স্যালাইন সংগ্রহ করেছে। কিন্তু গত ১৮ দিনে ৪ হাজার ৮০০ স্যালাইন শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মোনায়েম সাদ। অপরদিকে ঔষধ কোম্পানীগুলো স্যালাইন সরবরাহ করছে না। এতে উপজেলায় স্যালাইন চরম সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ী স্যালাইন মজুদ করে কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে চরা মুল্যে স্যালাইন বিক্রি করছে।

সোমবার আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখাগেছে, ৮৫ জন শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীদের উপচে পরা ভীড়। তিল পরিমান জায়গা ফাঁকা নেই। বারান্দার ফ্লোরে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।

খোজ নিয়ে দেখাগেছে, ৭০ টাকার স্যালাইন বিক্রি করছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় কয়েকটি ঔষধের দোকান ঘুরে দেখাগেছে, ওই দোকানগুলোতে কোন স্যালাইন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলার কয়েকজন অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ী স্যালাইন মজুদ করে সংঙ্কট তৈরি করে চরা মুল্যে বিক্রি করছেন।
আমতলীর গুলিাশাখালী গ্রামের মিজানুর ফকির, পশ্চিম চিলা গ্রামের শিশু আল আমিন, চালিতাবুনিয়া গ্রামের রাবেয়া ও ঘটখালী গ্রামের আহসান ও হাবিব ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের স্বজনরা বলেন, হাসপাতাল থেকে দু’একটি স্যালাইন দিচ্ছে। তারা আরো বলেন, বাহির থেকে চরা দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

রোগীর স্বজন মাজেদা বলেন, পাঁচ দোকান ঘুরে ১৪০ টাকায় একটি স্যালাইন কিনেছি।

আমতলী উপজেলা ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, ঔষধ কোম্পানীগুলো কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করছে না। এতে উপজেলায় স্যালাইনের চরম সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। দ্রুত স্যালাইন সরবরাহের দাবী জানান তিনি।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মোনায়েম সাদ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ মাসের শুরুতে ৬ হাজার স্যালাইন সংগ্রহ করেছি। গত ১৮ দিনে ৪ হাজার ৮০০ স্যালাইন খরচ হয়েছে। অবশিষ্ট এক হাজার ২০০ স্যালাইন দিতে আর কত দিন চলবে। ডায়রিয়ার যে অবস্থা তাতে দ্রুত স্যালাইন সরবরাহ না হলে সামাল দেয়া খুবই কষ্ট হয়ে দাড়াবে। তিনি আরো বলেন, লবনাক্ত পানির প্রভাবে নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষ বেশী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।