বরিশালে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ৪ দিনের মাথায় নাবালিকা শ্যালিকাকে বিয়ে!

শেয়ার করুনঃ

শামীম আহমেদ :: বরিশালের মুলাদী উপজেলায় জুয়েল হাওলাদার নামে এক যুবক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ৪ দিনের মাথায় নাবালিকা শ্যালিকাকে (১৫) বিয়ে করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীর শ্যালিকা ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মামলা থেকে রক্ষা পেতে দুলাভাই তাকে বিয়ে করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা তাকে সমাজচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত জুয়েল হাওলাদার উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের উত্তর কাজিরচর (বাইদের কান্দি) গ্রামের মৃত খলিল হাওলাদারে ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ৮মাস আগে জুয়েল হাওলাদারের পার্শ্ববর্তী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের সালাম বেপারীর মেয়ে রোকসানা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিলো। মাস খানেকের মধ্যে রোকসানার ছোট বোন কাজিরচর (খাসেরহাট) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা আক্তার আফসানার ওপর জুয়েলের কুনজর পড়ে। এরপর আফসানাকে কুপ্রস্তাব দেন জুয়েল। এতে রাজি না হলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আফসানার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন জুয়েল। এরপর জুয়েল তার শ্যালিকা আফসানাকে নিয়ে বিভিন্নস্থানে ঘুরতে যেতেন। আবাসিক হোটেলে আফসানাকে নিয়ে রাত কাটিয়েছেন বিভিন্ন সময়। স্ত্রী রোকসানা ও প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পেলে কয়েক মাস আগে জুয়েল আফসানাকে নিয়ে ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এরপর প্যাদারহাট এলাকায় আফসানাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করেন। এক সঙ্গে থাকার ফলে আফসানা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ কারনে আফসানা জুয়েলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। বিয়ে না করলে জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করার হুমকিও দেয় আফসানা। মামলা থেকে রক্ষা পেতে কাজিরচর ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী নূর শরীফ জানান জুয়েল হাওলাদার গত ২৫ এপ্রিল রোকসানাকে খোলা তালাক প্রদান করেন এবং ২৯ এপ্রিল আফসানাকে বিয়ে করেন।

রোকসানা বেগম জানান, বিয়ের মাসখানেক পর জানতে পারেন তার স্বামী জুয়েলের চরিত্র ভাল না। তাকে বিয়ের আগেও জুয়েল একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে মেলামেশা করার কথা তিনি বিয়ের পর জানতে পারেন। তবে সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি কিছুই জুয়েলকে বলেননি। তবে জুয়েলের কাছ থেকে দূরে থাকতে ছোট বোন আফসানাকে তিনি সাবধান করেছিলেন। কিন্ত আফসানা কম বয়সী। তার মাথায় এসব ঢুকানো যায়নি। সে জুয়েলের ফাঁদে পা দিয়ে তাকে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেছে।

রোকসানা বেগম বলেন, জুয়েল একটা লম্পট। সে আফসানার সঙ্গে বেশিদিন ঘর করবেন না। তাকেও ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে ধরবে। আফসানা দেখতে আমার চেয়ে সুন্দর। তবে তার ভালমন্দ বিবেচনার বয়স হয়নি। সে সোজা সরল। আমার মত তারও কপাল পুড়বে।

অভিযুক্ত জুয়েল হাওলাদার মুঠোফোনে জানান, প্রথম স্ত্রী রোকসানাকে নিয়ে তিনি ৮ মাসের মতো সংসার করেছেন। কিন্ত সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। তাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়া সম্ভব নয় বলে জানান জুয়েল। এ কারনে কয়েকদিন আগে তাকে তালাক দিয়ে তার ছোট বোন আফসানাকে তিনি বিয়ে করেছেন। তিনি বলেন, বিয়েতে আফসানার সম্মতি ছিল। এ বিষয় নিয়ে কে কি বলল, তাতে তার কিছু যায় আসে না।

কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী নূর শরীফ জানান, জুয়েল হাওলাদার গত ২৫ এপ্রিল রোকসানাকে খোলা তালাক প্রদান করেছেন। এরপর ২৯ এপ্রিল ফারজানা আক্তার আফসানা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের সময় পাত্রীর বয়স ১৮ বছর প্রমানে কাগজ পত্র দেখিয়েছেন। এরপর তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করানো হয়েছে।

কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মন্টু বিশ্বাস জানান, জুয়েল হাওলাদারের বিরুদ্ধে নারী উত্যক্তের বেশ কয়েকটি অভিযোগের কথাও শুনেছি। সম্প্রতি জানতে পেরেছি জুয়েল স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার ছোট বোনকে বিয়ে করেছেন। যতদূর জেনেছি জুয়েল হাওলাদার যাকে বিয়ে করেছেন সে নাবালিকা কিশোরী। আইন অনুযায়ী ওই কিশোরীর বিয়ের বয়স হয়নি। পাশাপাশি খোলা তালাক রেজিষ্ট্রি করার ৪ দিনের মাথায় নাবালিকা কিশোরীর বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিকাহ রেজিষ্ট্রারের কাছ জানতে চাওয়া হবে।

মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, কাজিরচর ইউনিয়নের উত্তর কাজিরচর (বাইদের কান্দি) গ্রামের এক যুবক অপ্রাপ্ত বয়সী এক কিশোরীকে বিয়ে করেছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।