বরিশালে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিপাকে পাউবোর নারী কর্মী

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর গাড়ি চালক লক্ষ্মণ চন্দ্র মালী এবং প্রকৌশলীর এক নিকট আত্মীয়ের বিরুদ্ধে একই দফতরের এক নারী কর্মচারীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অভিযোগকারীকে শাসিয়েছেন।

পাউবো রকয়েকজন কর্মকর্তা ও অভিযোগকারী সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সফিউদ্দিনের সরকারি বাসভবন নগরীর বিআইপি কলোনিতে বেয়ারা পদে কাজ করতেন এক নারী কর্মচারী। তার মূল কাজ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সরকারি বাসভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ওই নারী কর্মী যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর গাড়ি চালক লক্ষ্মণ চন্দ্র মালী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কথিত নাতি অপু প্রায়ই তাকে কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় ওই নারীকে অনৈতিক কাজ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তারা। কিন্তু কোনোভাবেই ওই নারীকে অনৈতিক কাজে রাজি করতে না পেরে নানা ছুতোয় তার সঙ্গে র্দুব্যবহার ও গালাগাল করত। এ অবস্থায় ওই স্থানে কাজ করা তার জন্য ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় অভিযুক্ত লক্ষ্মণ ও অপুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেন তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল ওই নারীকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সরকারি বাসভবন থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বদলি করা হয়। এ ঘটনা অফিসে জানাজানি হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই নারীর আবেদনের ১৫ দিন পর গত শনিবার (১ মে) সকাল ১০টায় পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত গাড়ি চালক উপস্থিত ছিল। এ সময় নারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে (অভিযোগকারী) এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসিয়ে দেন পাউবোর কর্মকর্তারা।

বিচার না পেয়ে ওই নারী মুঠোফোনে ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে রয়েছেন বলেও জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত লক্ষ্মণ চন্দ্র মালী বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত যৌন হেনস্তার অভিযোগ মিথ্যা। মূলত ওই নারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বাসায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো না। বিষয়টি তুলে ধরার কারণে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাউবো বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাসের মুঠোফোনে কল করা হলেও কলটি রিসিভ করেননি তিনি।

তবে বরিশাল পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সফিউদ্দিন বলেন, ওই নারী কর্মচারীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে সমাধান করা হয়েছে। তবে কী সমাধান হয়েছে সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বিষয়টি জানতে পাউবো দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঘটনাটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, একটি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে গিয়ে আরেকটি অন্যায় করেছে কর্তৃপক্ষ। নারী কর্মচারীকে যৌন হেনস্তার বিষয়টি সত্যি হয়ে থাকলে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’