বরিশালে টুলুর নেতৃত্বে রেনু পাচারের নেপথ্যে তিন মাঝি!

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর রুপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে নিরবে চলছে মৎস্য রেনু পাচার। পাচার রোধে প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও দু একজনকে ম্যানেজ করে বেশ নিরবেই চলে রেনু পাচার। বর্তমানে ওপেন সিক্রেট রেনু পাচার। যার কারনে বন্ধ হচ্ছে না রেনু শিকার। ধরা ছোয়ার বাইরে থাকা চক্রের মুল হোতারা বহাল তবিয়তে-ঘুরে বেড়াচ্ছে। রুট পরিবর্তন ও বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে অবৈধভাবে মৎস্য রেনু পাচার করছে এই পাচারকারী চক্র।

অভিযোগ রয়েছে- গুটি কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তি, কথিত কয়েকজন সাংবাদিক, দু-একজন অসাধু প্রশাসনের কর্মচারী মাসোয়ারা নিয়ে পাচারকারীদের সহযোগিতা করছেন। আর ট্রানজিট রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছে রুপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডকে। এখান থেকে কুয়াকাটা-পটুয়াখালী-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাট-খুলনায় চলে যায়। কখনো বা আবার বরগুনা-পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাট-খুলনায় চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রেনু পাচার চক্রের মূলহোতা বরিশাল কোষ্টগার্ড জাহাজের মাঝি দুদু, হাসান ও মিঠুন। তবে কোটি টাকা মূল্যের এসব রেনু’র মালিক টুলু নামের কালো ব্যবসায়ী। বরিশাল ও ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব রেনু সংগ্রহ করেন টুলু। আর তা পাচার করে বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকার বাসিন্দা দুদু,হাসান ও মিঠুন। মৗসুমে প্রতি গভীর রাত ৩ টা থেকে ভোর ৬ টার মধ্যে রেনু বোঝাই ট্রাক পাচারের ট্রানজিট পথ অতিক্রম করে। যদিও রেনু সংগ্রহ, সংরক্ষন পাচার সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ।

সূত্র জানায়, প্রতিবছর মার্চের শেষ দিক বিভিন্ন উপকুলীয় অঞ্চল থেকে মশারী জালের মাধ্যমে রেণু পোনা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ শুরু হয়। রেনু সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ চলে জুন মাসের শেষ সময় পর্যন্ত।প্রতিদিন শত শত ড্রাম রেনু ট্রাকযোগে বাগেরহাটের ফকিরহাট, বটতলা, খুলনার ফুলতলা, বড়ঘাট ও চুকনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার হয়ে থাকে। প্রতি ড্রামে কমপক্ষে ২০ হাজার রেনু পোনা থাকে বলে জানায় একাধিক সূত্র। এসব রেনু প্রতিপিচ ৫-১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ হিসেবে বরিশাল ঘাট থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার রেনু পাচার করা হয়। এ সব নিষিদ্ধ রেনু পোনা স্থানীয় রাঘোব বোয়ালদের ও দুর্ণীতিপরায়ন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে সড়ক পথ দিয়ে বড় বড় ড্রাম কিংবা হাড়ি ভর্তি করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান করে প্রভাবশালী দালাল চক্র। ফলে জলজ প্রাণির ওপর মারাত্মক প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, একটি চিংড়ির রেনু পোনা ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেনু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য দুদু ও মিঠুনের মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে টুলু ও হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে মৎস্য কর্মকর্তা বিমল দাস বলেন,‘আমরা সংবাদ পাওয়া মাত্র অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু পাচারকারীরা শুধু বরিশালে নয়, রেনু পাচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে।’