হায়া সোফিয়ায় নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত করলেন এরদোয়ান

শেয়ার করুনঃ

গির্জা থেকে মসজিদ পরে জাদুঘরে রূপান্তরিত হওয়া দেড় হাজার বছরের পুরনো হায়া সোফিয়াকে আবারও মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর সেখানে প্রথমবারের মতো শুক্রবারের জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮৬ বছর পর তুরস্কের ঐতিহাসিক এই মসজিদে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

হাজার হাজার মুসল্লি হায়া সোফিয়ায় এবং এর বাইরে জুমার নামাজ আদায় করছেন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের অংশ হতে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে থেকে আসেন তারা। ১৯৩৪ সালের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে অংশ নিতে মসজিদে এসে উপস্থিত মুসল্লিদের কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের প্রধান গির্জা (ক্যাথেড্রাল) হিসেবে হায়া সোফিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক শতাব্দী পর অটোমান শাসকরা এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। ১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তুরস্কের তৎকালীন ক্ষমতাসীন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। ১৯৮৫ সালে জাদুঘর হায়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

অর্থাৎ ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ৯২১ বছর গির্জা এবং ৪৮২ বছর মসজিদ ছিল হায়া সোফিয়া। পরবর্তীতে ১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এর ৮৬ বছর পর শুক্রবার (২৪ জুলাই) ঐতিহাসিক এই স্থাপনা জুমার নামাজের মাধ্যমে মসজিদে ফিরে এসেছে।

গত ১০ জুলাই তুরস্কের আদালত হায়া সোফিয়াকে জাদুঘরের মর্যাদা বাতিল করে মসজিদে রূপান্তরের আদেশ দেন। মসজিদ ছাড়া অন্যকিছু হিসেবে এটির ব্যবহারকে অবৈধ বলেও জানান আদালত।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের নিয়ে হায়া সোফিয়ায় আসেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মসজিদের চার মিনার থেকে আজান শুরু হওয়ার আগে উপস্থিত মুসল্লিদের কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান তিনি।

পরে দেশটির ধর্মীয় কল্যাণ বিষয়ক দফতরের প্রধান আলী এরবাস খুতবা পাঠ করেন; যা দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের এরজুরাম এলাকায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন আইনুর সাতাসি (৪৯)। কিন্তু শুক্রবারের জুমার নামাজে অংশ নিতে ছুটি বাতিল করে হায়া সোফিয়ায় আসেন তিনি। বলেন, এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ছুটি সংক্ষিপ্ত করে ইস্তাম্বুলে ফিলে এসেছি। কারণ আমি জানতাম, হায়া সোফিয়ায় নামাজ পড়তে পারবো। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দেশটিতে ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। নামাজে অংশ নেয়া অনেক মুসলিম শুক্রবারের এই জুমার নামাজকে ‘যুগান্তকারী’ হিসাবে দেখছেন।

হায়া সোফিয়ায় জুমার নামাজে অংশ নিতে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ আসেন। মাত্র এক হাজার মানুষ মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেলেও এর চারপাশে রাস্তায়, গাছের নিচে মাটিতে জায়নামাজ পেতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্বাক্ষী হন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, নামাজে অংশ নিতে আসা লোকজন ফুটপাতে, রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে যান। ভাগ্যবানরা গাছের ছায়ার নিচে জায়গা পান।

শুক্রবারের এই নামাজ উপলক্ষ্যে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক এই স্থানের আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বেশ কয়েকটি পুলিশি তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান মুসল্লিরা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে নামাজে অংশ নিতে হয় তাদের। সেখানে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য মেডিক্যাল কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়।

অনেক তুর্কির হাতে দেশটির পতাকা দেখা যায়; আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকা।