বরিশালে অনুমোদন ছাড়াই চলছে ৬৯ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক!​​​​​​​

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দিন যত যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ব্যাঙের ছাতার মতো এগুলো গজিয়ে ওঠায় যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।

শঙ্কার বিষয় হলো, একই ল্যাবে পরপর দুদিন নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন। আবার ল্যাব পরিবর্তন করার পর ফলাফল বদলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এরমধ্যে প্যাথলজি রিপোর্টে মৃত চিকিৎসকের সই ব্যবহার, টেকনোলজিস্ট ও চিকিৎসকের ভুয়া সই ব্যবহার, পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদানের মতো ঘটনা বেরিয়ে এসেছে প্রশাসনের তৎপরতায়।

প্রশাসনের কড়া অবস্থান এবং অভিযানে সনদধারী টেকনোলজিস্ট বিহীন রিপোর্ট প্রদান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ কাগজপত্র না থাকা কিংবা থাকলেও হালনাগাদ না করার বিষয়টি বের হয়ে এসেছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপরতা বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ৯৬১টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল আছে। এরমধ্যে ৬৯.১ শতাংশেরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নেওয়া লাইসেন্স নেই। এরমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৬৬ শতাংশের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক। যদিও লাইসেন্স প্রাপ্তির আগে আবেদন থেকে শুরু করে পরিদর্শন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ঝুলে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের হিসাবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৭০১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ২৬০টি প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতাল রয়েছে।

৭০১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ২০৯টির। বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ১১৬টির মধ্যে ২৮টি, বরিশাল জেলায় ১৪৬টির মধ্যে ৬২টি, ভোলা জেলায় ৮৭টির মধ্যে ৪৬টি, পটুয়াখালীতে ১৬৭টির মধ্যে ৩০টি, বরগুনায় ৬০টির মধ্যে ১৮টি, পিরোজপুরে ৯৪টির মধ্যে ১৭টি ও ঝালকাঠিতে ৩১টির মধ্যে ৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স রয়েছে।

আর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সম্পূর্ণ কাগজপত্র পাওয়ার পরে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলায় মোট ৫৬টির পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, যারা এখন লাইসেন্স প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া ৬৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৭১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে এবং ১৬৮টি অনিষ্পাদিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ১৩৩টি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

অপরদিকে ২৬০টি প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতালের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৮৮টির। যারমধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ৩৯টির মধ্যে ১১টি, বরিশাল জেলায় ৫৩টির মধ্যে ২৭টি, ভোলা জেলায় ৩১টির মধ্যে ১২টি, পটুয়াখালীতে ৫৩টির মধ্যে ১২টি, বরগুনায় ২৪টির মধ্যে ৮টি, পিরোজপুরে ৪৬টির মধ্যে ১৫টি ও ঝালকাঠিতে ১৪টির মধ্যে ৩টি প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে।

হিসাব অনুযায়ী, সম্পূর্ণ কাগজপত্র পাওয়ার পরে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ৬ জেলায় মোট ২২টির পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, যারা এখন লাইসেন্স প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ১৩টি প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাকিদের মধ্যে ২০টি প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতাল লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে এবং ৫৩টি অনিষ্পাদিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ৬১টি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন বার বার সাবমিটের কারণে হিসাবে কিছুটা গরমিল হতে পারে বলে জানিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সংশ্লিষ্ট দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত যে হিসাব তারা পেয়েছেন তা শুধু যারা অনলাইনে আবেদন করেছেন তাদের মধ্য থেকে বের করা হয়েছে। আর যারা আবেদন করেননি তাদের হিসাবটা অন্যরকম। যা এখনো হাতে আসেনি।

সার্বিক বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, নিয়ম যেটা সে হিসাবে আমরা কাজ করছি। বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক পরিদর্শনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যারা লাইসেন্স নবায়ন করেননি তাদের যেমন অবগত করা হচ্ছে, যারা লাইসেন্সের আবেদন করেননি বা আবেদন করে পরবর্তী কার্যক্রম অগ্রসর করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেননি তাদের সেগুলো জমা দিতে বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়, আমরা এখন যে তথ্য পাচ্ছি তা অনলাইনে যারা আবেদন করেছেন তাদের হিসাব অনুযায়ী। তবে যারা আবেদনই করেননি তাদের হিসাবটা আলাদা। সেই হিসাব শেষে বর্তমান হিসাবের গরমিল হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজ শেষ হলে বরিশালে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের সর্বশেষ অবস্থা স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তুলে ধরবো। যাতে নিয়ম ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। কারো জন্য নিজের কাঁধে দোষ নেওয়ার ইচ্ছে নেই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার পরও সংশ্লিষ্ট দফতরের কারণে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্স পেতে অনেকটা সময় লাগছে মালিকদের। আর এজন্যই অনিষ্পাদিত অবস্থায় রয়েছে বরিশালের ২ শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্স প্রাপ্তির কার্যক্রম।

আর অনিষ্পাদিত অবস্থায় থাকা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর জমা দেওয়া কাগজপত্রে কোথাও না কোথাও কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।