মানুষের হাতে টাকাই তো নেই, শপিং করবে কীভাবে?

শেয়ার করুনঃ

‘সকাল থেকে বসে আছি। কোনো বিক্রি নেই। দু-একজন কাস্টমার আসে, তা-ও দেখে চলে যাচ্ছে। করোনায় একেবারে অবস্থা খারাপ। ঈদে মালিক বেতন-বোনাস কীভাবে দেবেন- এটাই তো বুঝতেছি না। আগে ঈদের এ সময় ক্রেতার চাপে অবসর থাকত না। এখন অলস বসে আছি। ঈদের আগে বাকি দিনগুলোতে ব্যবসা বাড়বে- এটারও কোনো লক্ষণ দেখছি না।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের নাইস ফেব্রিক্সের বিক্রয়কর্মী সিফাত।

তিনি জানান, গত ঈদে বেশিরভাগ সময় দোকান বন্ধ ছিল। ব্যবসা হয়নি। কয়েক মাস দোকান বন্ধ রেখে ভাড়া দিতে হয়েছে। এখন দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা কম। যে টাকার বিক্রি হয় তাতে খরচই ওঠে না।

বিক্রয়কর্মী সিফাত বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন মালিক লস দিয়ে আমাদের বেতন দেবেন? সামনে ব্যবসা হবে তারও কোনো লক্ষণ নেই। কারণ সারা বছর দুই ঈদেই আমাদের ব্যবসা হয়। বাকি সময় কোনোমতে চলে। এবার দুই ঈদেই পুরো ধরা। মাকের্টের বেশিরভাগ দোকানেই কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। যাদের পাঁচজন ছিল তারা তিনজন আর যাদের তিনজন ছিল তারা দুজন- এভাবে কর্মী কমিয়ে দোকান চালাচ্ছে। কারণ ব্যবসা না হলে মালিক কয়দিন বসিয়ে বেতন দেবেন।’

ঈদের আগে সব সময় মৌচাক, আনারকলি, আয়শা শপিং কমপ্লেক্স, ফরচুনসহ মাকের্টগুলোতে ক্রেতার উপচেপড়া চাপ দেখা যেত। কিন্তু এখন চিত্র তার উল্টো। দোকানগুলোতে ক্রেতা কম, বিক্রয়কর্মীরা অলস বসে আছেন। ক্রেতা দেখলেই ডাকাডাকি শুরু করছেন দোকানিরা। ক্রেতা আকর্ষণে বিভিন্ন অফার ও মূল্যছাড়ের ঘোষণা দিচ্ছেন। তারপরও ক্রেতা মিলছে না।

মৌচাক মোড়ে ডিএফ পয়েন্ট ক্রেতাদের জন্য ‘বিগ অফার’ নামে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য অফার তারা নেই। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘তিন-চার মাস ব্যবসা বন্ধ ছিল। বিক্রি নেই তাই বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রেতার তেমন সারা পাচ্ছি না। এত বড় শোরুম ভাড়া, কর্মীদের বেতন সব মিলিয়ে খরচ অনেক। কিন্তু আয় নেই। সামনে কী হবে আল্লাহ ভালো জানে।’

আয়শা শপিং কমপ্লেক্সের মাতৃভূমি পাঞ্জাবি শোরুমের জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্যবসার এমন অবস্থা হবে কখনো চিন্তাও করিনি। খুবই খারাপ অবস্থা। আমার চারটা শোরুম ছিল। বাধ্য হয়ে দুটি ছেড়ে দিয়েছি। কয়দিন বসিয়ে ভাড়া দেব। এখন দুটি চালাচ্ছি। তারপরও দোকানের ভাড়াও ওঠে না।’

তিনি বলেন, ‘করোনায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে অন্য কোনো ব্যবসা করব তারও সুযোগ নেই। গত মার্চে আনা মাল (পাঞ্জাবি) গোডাউনে পড়ে আছে। রোজার ঈদে বিক্রি করব বলে এনেছিলাম। কিন্তু কার্টনই খুলি নাই। মনে করেছিলাম এবার কিছু বিক্রি হবে। কিন্তু ক্রেতা নেই। আসবেই কীভাবে। মানুষের হাতে তো টাকাই নেই। সংসার চলে না। শপিং করবে কীভাবে। দু-তিন মাস খুলব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব কী করব। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় আরও একটি দোকান ছেড়ে দিয়ে একটি চালাব।’

মৌচাকের দোতলার সিঁড়িতে জুয়েলারি পণ্য সাজিয়ে বসে আছেন অপূর্ব নামের এক বিক্রেতা। আগে ঈদের সময় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। এবার ব্যতিক্রম। বিক্রি টুকটাক। তবে গতকাল থেকে বিক্রি একটু বেড়েছে-তিন-চার হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সব জায়গার অবস্থায়ই খারাপ। আমাদেরও একই অবস্থা। কোনোমতে টিকে আছি।’

যাদের জরুরি কেনাকাটা করা প্রয়োজন শুধু তারাই মার্কেটে আসছেন বলে জানান ক্রেতারা। বাড্ডা থেকে আসা ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, পাঁচ বছরের ছেলে আছে। গত ঈদে বাড়ি ছিলাম, তাই কোনো কেনাকাটা করিনি। এবার কিছু একটা কিনে দিতে হবে তাই এলাম।

তিনি বলেন, ‘করোনার ভয়তো সবারই আছে। তারপরও কী করা! জীবন তো থেমে নেই। সবকিছু বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসেছি।’