বরগুনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ

শেয়ার করুনঃ

বরগুনা প্রতিনিধি :: বরগুনায় নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, ইলিশ মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে মেনে চলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ আহরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দাম এখনও চড়া থাকলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কমে যাবে বলে মনে করছেন বরগুনার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বরগুনার জেলেরা জানান, প্রতিটি ট্রলারে ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও স্থানীয় বাজারে বড় সাইজের ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে।

মৌসুমি বায়ু সময়মতো সক্রিয় হওয়ায় এবার সার্বিক আবহাওয়া ইলিশের অনূকলে বলে বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান।

বরগুনার পাথরঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) একটি ইউনিট ‘মৎস্য অবতরণ এবং পাইকারী মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্র’।

মাহাবুব আলম বলেন, পাথরঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মৎস্য বন্দর এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ইলিশ মৌসুমে এ অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুইশ টন ইলিশ বেচা-কেনা হয়। দেশের উৎপাদিত মোট ইলিশের ১৩% বরগুনা জেলায় আহরণ করা হয়। গত অর্থবছরে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল।

“গত দুই দিনে বিএফডিসির পাইকারি মাছ বাজারে যে ট্রলারগুলো এসেছে সেগুলোর জেলেরা ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছে। তবে দামটা ছিল খুব চড়া। এক কেজি ওজনের ওপরের ইলিশের মণ ছিল ৪৬ হাজার টাকা এবং এক কেজি ওজনের নিচের ইলিশের মণ ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।”

প্রতিটি ট্রলারই ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছে জানালেন পাথরঘাটার বিএফডিসি পাইকারি মাছ বাজারের মার্কেটিং অফিসার মো. অলিউল্লাহ।

তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহে এই বাজারে নদী ও সাগরের ৯১ হাজার ৭২৪ মণ ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সাগরে ঝড়-বাদল যদি না থাকে তাহলে এ বছর ইলিশের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। নদীগুলোতে কম সংখ্যক হলেও বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশের আকার বড় হওয়ায় স্থানীয় বাজারে দামও খুব চড়া।

“এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার দুশ টাকা দরে; আর তার চেয়ে একটু বেশি ওজন হলেই তা বেড়ে দেড় হাজার টাকায় উঠে যাচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান। পাথরঘাটায় অতি সম্প্রতি ২ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি মাছ বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকায়।”

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বাজারের বাবুরাম কর্মকার জানান, এ বছর ইলিশ মৌসুমের প্রথমেই ইলিশ মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই জেলেরা সাগরে গিয়ে ইলিশ মাছ ধরা শুরু করেন। প্রতিটি ট্রলারে কমবেশি সবারই জালে ইলিশ ধরা পড়েছে। বিএফডিসি পাইকারি মাছ বাজারে ৯৯ জন আড়তদার; সবাই ট্রলার মালিকদের কমবেশি দাদন দিয়ে ট্রলার সাগরে পাঠিয়েছেন।

পাথরঘাটা বিএফডিসি আড়তদার সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. মারুফ হোসেন বলেন, এখন মাছের যে চড়া দাম তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি আদেশে প্রতিবছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ; এবং ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাসের বেশি সময় জাটকা ধরা, বিক্রি, পরিবহন নিষিদ্ধ থাকে। এরমধ্যে গত বছর থেকে সাগরে ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ৬৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মাছের আকার বড় হয়েছে।

মারুফ বলেন, “গত ২৪ জুলাই থেকে ১১ অক্টোবর তিন মাস এবং ৩ নভেম্বর থেকে ১৯ মে পর্যন্ত জেলেরা ইলিশ ধরতে পারবে। সরকারি বিধি নিষেধের সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে কর্মবিরতি এবং ফলশ্রুতিতে দূষণমুক্ত হয়েছে নদীর পানি। প্রতিকূল অবস্থায় বরাবরের মতো নদীতে জেলেদের জালও পড়েনি খুব একটা। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে নদীগুলো থেকেছে কানায় কানায় পূর্ণ। জেলেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে।”

সব মিলিয়ে এ মৌসুমে সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ব্যাপক ইলিশ আহরণ হবে বলে ইলিশের জেলা বরগুনার জেলে, ব্যবসায়ী, সাধারণ ক্রেতা, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এ বছর নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। ইলিশ চলাচলের পথও সুগম ও সাবলীল। নদীগুলোতে ইলিশ আগমনের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। তাই এই মৌসুমে প্রচুর ইলিশ প্রাপ্তিসহ ভালো বাণিজ্যেরও আশা করছি।”