মাদকে বাধা দেয়ায় যুবককে হত্যা

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক:: বাবা মায়ের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে রাসেল রানা বড়। হতদরিদ্র বাবা বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাসেল। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় শিশু কানন নামের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে রাসেলের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেনও তিনি। এটাই তার কাল হয়ে উঠল। কয়েকদিন আগে স্থানীয় কয়েক মাদক ব্যবসায়ীকে ঘৃণ্যতম এ পেশা ছেড়ে আলোর পথে আসতে বলেন রাসেল। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাদক ব্যবসায়ীরা।

শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বারতোপা বাজারে চায়ের স্টল থেকে ধরে নিয়ে যায় ইমরানের নেতৃত্বে কয়েক মাদক ব্যবসায়ী। পরে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। এক পর্যায়ে মারা গেলে রাতের আঁধারে পাশের একটি খালের পাশে মরদেহ ফেলে দেয়া হয়।

ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরে বাবা তার স্বজনদের নিয়ে সারারাত খুঁজতে থাকেন। রোববার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় বিলাইঘাটা এলাকায় লবলঙ্গ খালের পাড় থেকে ছেলের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন।

রাসেল গাজীপুরের শ্রীপুরের সিংদিঘি গ্রামের সুজন আলীর ছেলে। আর অভিযুক্ত ইমরান বারতোপা গ্রামের বাক্কার মণ্ডলের ছেলে।

নিহত রাসেলের বাবা সুজন আলী জানান, বহু কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছেলে বাড়ির পাশেই একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করত। অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। গতকাল বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বাজারে যাওয়ার জন্য। তার বন্ধু তাকে মোটরসাইকেলে করে বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। পরে সন্ধ্যায় খবর পান তার ছেলেকে ইমরান নামের এক যুবক বাজার থেকে ধরে নিয়ে মারধর করছে। সারারাত ছেলের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যায়নি। সবাই বলছে অভিযুক্ত ইমরান কয়েকজনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরেছেন আর মোড়ে মোড়ে নামিয়ে মারধর করেছেন।

তিনি আরও জানান, গত ২ সপ্তাহ আগে ইমরানকে স্থানীয় মাওনা ফাঁড়ির অস্থায়ী ক্যাম্পের পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়। এরপর তার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে ইমরান। গতকাল তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ইমরানের বাবার হাতে পায়ে ধরেছি। ইমরানকেও ছেড়ে দিতে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করেছি। সে বলেছে কিছু মারধর করে ছেড়ে দিয়েছে, রাতেই বাড়ি চলে আসবে। কিন্তু সে তো আর এলো না।

এ বিষয়ে মাওনা ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে স্থানীয় সলিং মোড় থেকে ইমরানকে ফাঁড়িতে ডেকে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে নির্দ্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল হক জানান, সম্প্রতি এলাকায় মাদক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইমরান মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদকের প্রতিবাদ করায় এভাবে একজনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে মেরে ফেলবে তা বিশ্বাস হচ্ছে না।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ব্যাপক মারধরের পর শ্বাসরোধ করে এ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।