বেশিরভাগ মুসলিম দেশেই ব্যক্তি স্বাধীনতা কম!

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: ইসলাম ধর্মে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সেঙ্গে দেখা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফেই বলা হয়েছে, কাউকে জোর করা যাবে না। এরপরও কেন মুসলিম বিশ্বের উন্নতি হবে না- এর আসলে যুক্তিসঙ্গত কোনও ব্যাখ্যা নেই। সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক কাতো ইনস্টিটিউটের জন্য লেখা এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্নই তুলেছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত লেখক ও কলামিস্ট মুস্তফা আকিওল।

বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫১টি দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি মত দিয়েছেন, হতাশাজনক হলেও ইসলামী বিশ্বের প্রকৃত অবস্থা খুবই দমনমূলক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

মুস্তফা আকিওল তার প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিশ্বের ১৯০ কোটি মুসলিমের মধ্যে মাত্র ছয় কোটি মানুষ এমন দেশগুলোতে থাকেন, যেখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার স্তর বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। আর ১৮০ কোটিরও বেশি মুসলিম এমন জায়গায় থাকেন যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার মাত্রা সুস্পষ্টভাবে বৈশ্বিক গড়ের অনেক নিচে।

এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তিনি মানব স্বাধীনতা সূচক ব্যবহার করেছেন। এতে আন্দোলনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, পরিচয়, আইনের আশ্রয় এবং অবশ্যই ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন অধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে।

সন্তোষজনক ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগকারী ছয় কোটি মুসলিমের মধ্যে তিন কোটি মানুষ বাস করেন অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র জনসংখ্যা বিশিষ্ট আলবেনিয়া, বসনিয়া, বুরকিনা ফাসো, কিরগিজস্তানের মতো দেশগুলোতে। বাকি তিন কোটি থাকেন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক পরিবেশে।

সূচকের বিপরীত প্রান্তের দেশগুলো মূলত কর্তৃত্ববাদী; যেমন- মিসর, ইরান, সৌদি আরব ও সুদান। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সম্পন্ন দেশগুলোও রয়েছে এই সীমার মধ্যে। আর এ দুই পক্ষের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানের মতো বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এশীয় দেশগুলো।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সাবেক কমিউনিস্ট দেশগুলোতে নারীদের অধিকারের বিষয়টি সর্বোত্তমভাবে পালন করা হচ্ছে বলে মনে হয়। যদিও তারা সবক্ষেত্রে মুক্ত না-ও হতে পারে। তবে অন্তত ধর্মনিরপেক্ষ আইনের ধারাগুলো ধরে রেখেছে এসব দেশ। এদের মধ্যে রয়েছে আজারবাইজান, বসনিয়া, কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান।

মুস্তফা আকিওল গত এক দশকে বাহরাইন, মিসর, সিরিয়া ও তুরস্কে সবধরনের স্বাধীনতায় ‘নাটকীয় অবনতি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল এবং কিছুটা কম হতাশাজনক চিত্র খুঁজে পেয়েছেন তিনি।। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও ভালো করেছে রাজতন্ত্রের দেশগুলো (বাহরাইন, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত)।

শাসন ব্যবস্থা প্রধাগত হোক বা ধর্মনিরপেক্ষ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার চেয়ে কম স্বাধীন। এ বিষয়গুলোই নিজের লেখা শেষ প্রবন্ধে তুলে ধরেছিলেন সৌদির সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটন পোস্টে ‘আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো মুক্ত মতপ্রকাশ’ (হোয়াট দ্য আরব ওয়াল্ড নিডস মোস্ট ইস ফ্রি এক্সপ্রেশন) শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল লেখাটি। এর কিছুদিন পরেই তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে প্রাণ হারান তিনি।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট