গল্প-কাহিনী সাজিয়ে হাসিব-রাকিবকে রুখতে নয়া মিশন, সমালোচনার ঝড়!

শেয়ার করুনঃ

নিউজ ডেস্ক :: বরিশালের দুই তরুণ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। গল্প-কাহিনী সাজানো এই মামলার এজাহারে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, বিচার-বিশ্লেষণ করলে বাদী যে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন তা প্রতীয়মাণ হচ্ছে। এতে করে বরিশালের গোটা মিডিয়া পাড়ায় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পাঠকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।

এই মামলা দায়েরের একদিন আগে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) বরিশালের একই আদালতে ‘নিউজ এডিটরস্ কাউন্সিল বরিশালের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক খন্দকার রাকিব বাদী হয়ে ৫ জনের নামোল্লেখ করে মামলা দায়েরের পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই কাউন্টার মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রমোশনাল খবর

বিস্ময়কর বিষয় হলো, সাংবাদিক হাসিব-রাকিবকে আসামি করে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী সোহরাব হোসেনের অভিযোগ হচ্ছে, তার পুত্র আল আমিন সাগরের কাছে চাঁদার দাবীর প্রেক্ষাপটে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

অথচ ঘটনার সূত্রপাত সেই ০১ সেপ্টেম্বর। নগরীর স্বরোড এলাকার এক নারীর অনুরোধে নিউজ এডিটরস্ কাউন্সিল বরিশালের সভাপতি হাসিবুল ইসলাম তার বাসার সামনে উপস্থিত হয়। কিন্তু আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা বিতর্কিত সাংবাদিক নেতা এস এম জাকির হোসেনের বেশ কয়েকজন অনুসারী অবরুদ্ধ করে ফেলে হাসিবকে। খবর পেয়ে খন্দকার রাকিব সেখানে যাওয়া মাত্রই তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়।

এই হামলার পেছনের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট হয়েছে জাকিরসহ ৬ জনকে আসামি করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে খন্দকার রাকিবের মামলা। মামলা করার অপরাধে রাকিবকে শায়েস্তা করতেই হাসিবকে ডেকে নিয়ে একটি ফাঁদ পাতা হয়েছিল। যাতে একদিকে হাসিবকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা যায়, অন্যদিকে রাকিবকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যখন রাকিবের ‍উপর হামলা করা হয়েছিলো তখন হামলাকারীরা বার বার বলছিলেন, তোর এত বড় সাহস, তুই জাকির ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করছো, তোকে আজ মেরেই ফেলবো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলায় অংশগ্রহণকারীরা জাকিরের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত এবং একজন যুবক ব্যতিত সকলে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ধ্যারাতের ওই ঘটনা গভীর রাতে সমাপ্তি টানার পরদিন জাকির তার নতুন সংগঠন প্রকাশক-সম্পাদক পরিষদের বৈঠক ডেকে দুই তরুণের বিরুদ্ধে নৈতিবাচক সংবাদ প্রকাশে সিদ্ধান্ত নেয়।

দেখা গেছে- পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের সমর্থিত বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের উল্লেখ করা হয়েছিল, তানিয়া নামক এক নারীকে একজন যুবকের পক্ষে চাপ সৃষ্টি করতেই হাসিব-রাকিবের সেখানে উপস্থিতি ঘটে। এসময় হাসিব রাকিবকে ওই নারীর ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ওই সংবাদটির শেষের দিকে লেখা হয়েছিলো- অবরুদ্ধ হাসিব নারীর ঘরে আটকা থেকে যান। শেষে ক্ষমা চেয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। অবরুদ্ধদশা থেকে বের হয়েই উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। মূলত বিষয় হচ্ছে, যারা সংবাদে লিখেছিলো হাসিব হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারাই আবার হাসিব রাবিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার স্বাক্ষী। যে মামলায় উল্লেখ করা হয়- হাসিব-রাকিব ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা না পাওয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাগরকে কুপিয়ে আহত করে। (সেই সংবাদে সাগর নামের ওই যুবক বক্তব্য দিয়েছিলেন- ঘটনাস্থলে ওই এলাকার উৎসাহি অনেক লোক ছিল। তাদের ঠেলে ভিতরে গিয়ে দাড়িয়ে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বের করি। এসময়ে হাসিবুল এবং খন্দকার রাকিব আমার ওপর হামলা চালান। আমি আত্মরক্ষার্থে সেখান থেকে চলে গিয়ে মূল সড়কে উত্তর দিকে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান করি। কিন্তু রাকিব বাহিনী আমার পিছনে পিছনে এসে সেখানে আমার ওপর আবার হামলা চালিয়ে আমার ক্যামেরা ও মোবাইল ভাংচুর করে নিয়ে যান।) অথচ আজ সোমবার দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ওই নারীর কাছে হাসিব-রাকিব ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় আল আমিন সাগর প্রতিবাদ করে। একপর্যায়ে ওই যুবককে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করলে সেখানে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এবং আল আমিন সাগরকে পিটিয়ে আহত করা হয়।

মামলার এজাহারের সাথে ঘটনার পরদিন প্রকাশিত সংবাদের বেমিল খুঁজে পাওয়ায় অনেকের ধারণা খোড়া অজুহাতে থানায় মামলা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর আদালতে মিথ্যাচারের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নিতে কৌশল নিয়েছে প্রতিপক্ষরা। সেখানে মামলার বাদী আল আমিন সাগরের পিতা সোহরাব হোসেন সমুলে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে আদালতের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করল।

এদিকে খবর পাওয়া গেছে, বিদ্রোহী তরুণেরা জাকিরসহ কথিত সাংবাদিকদের প্রতি অনাচারের কারণে মিডিয়ার মধ্যে চলমান বিভাজনে মূলত তরুণদের সাথে পেরে না ওঠায় এখন তাদের কর্মস্থল টার্গেট করে চাকরিচ্যুত করার আরেকটি পরিকল্পনায় হয়েছে। তার আলামত হচ্ছে, ওই দিনের ঘটনার সূত্রপাত টেনে সাংবাদিক নেতা জাকির প্রসঙ্গে দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকায় একটি তথ্যবহুল দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তার কৈফিয়ত চেয়ে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আরেকটি সূত্র বলছে, হাসিবুল ইসলামের কর্মক্ষেত্র জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাথেও ওই মহলটি যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যাতে তাকে চাকরিচ্যুৎ করা যায়। সেই লক্ষ্য পূরণে দীর্ঘ একটি অভিযোগপত্র সাজিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা মিসাইল আকারে ওই পত্রিকা দপ্তরে নিক্ষেপে সুযোগের অপেক্ষমান রয়েছে। উল্লেখ্য, হাসিব ওই দৈনিক পত্রিকাটির প্রকাশলগ্ন থেকে বরিশাল ব্যুরো চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ, একদিনের ব্যবধানে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলার এজাহার থানা পুলিশকে গ্রহণে বিচারকের নির্দেশনামা গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল নাগাদ কাউনিয়া থানায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বরিশাল মিডিয়ার এই বিভাজনের লড়াই এবং নেতৃত্ব থাকা ব্যক্তি-বর্গের অতীত ইতিহাস অবগত ও স্বরোডের ওই হামলার ঘটনায় তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে কৌশলী পন্থা গ্রহণ করেছে। যাতে কোন পক্ষই নাখোশ না হয়। কিন্তু নেতৃত্ব অভিলাসী চক্রটি শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে যেমন যোগাযোগ রাখছেন, তেমনই তাদের স্বপক্ষে অন্তত ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একটি অংশকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে বিভিন্ন দরজায় কড়া নাড়ছেন।

তাদের ভেতরকার আরেকটি সূত্র আভাস দিয়ে বলছে, তরুণরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠার পেছনে কারা সাহস যুগিয়েছে এবং অর্থের যোগান কিভাবে আসছে তা নির্ণয় করে সেই পথ রোধে বেশ কয়েকজন গুপ্তচরকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসব খবর আর গোপন থাকছে না। ফলে বরিশালের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও প্রগতিশীল ধারার সংবাদকর্মীরা এখন ক্রমান্বয়ে তরুণদের পক্ষে সমর্থন দিতে শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে বিভাজনের রেখা দীর্ঘায়িত হলে কলম রেখে সংঘাত-রক্তপাত অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে, এমনটিই চাচ্ছেন নেতৃত্ব অভিলাসী চক্রটি।’