জন্মের আগেই দাখিল পাস করলেন এক কাজী

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক ::: নওগাঁর রানীনগরে শিক্ষকের সনদপত্র ঘষামাজা (টেম্পারিং) করে জন্মের এক বছর আগে দাখিল ও জন্মের এক বছর পর আলিম পাসের অভিযোগ উঠেছে বেলাল হোসেন নামে এক ভুয়া কাজীর বিরুদ্ধে। সনদপত্র জালিয়াতি করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারি করে আসছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সমিতিভুক্ত কাজীরা।

বেলাল হোসেন রানীনগর উপজেলার ৫নং বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে। রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদরাসা থেকে পাসের সনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৮৪ সাল। কিন্তু জন্মের এক বছর আগে ১৯৮৩ সালে দাখিল ও জন্মের এক বছর পর ১৯৮৫ সালে আলিম পাস করার সদনপত্র দাখিল করে ২০০৩ সালে কাজীর লাইসেন্স বাগিয়ে নেন তিনি। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও ২০০৩ সালে কীভাবে কাজীর লাইসেন্স পায় বেলাল হোসেন তা নিয়ে সচেতন মহলে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।

উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দীনের ছেলে রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদরাসার শিক্ষক বেলাল উদ্দীন বগুড়ার কাহালু উপজেলার মাগুরা এমইউ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে ১৯৮৩ সালে দাখিল ও ১৯৮৫ সালে আলিম পাস করে রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। এ শিক্ষকের দাখিল ও আলিম পাসের সার্টিফিকেট সুকৌশলে সংগ্রহ করে ঘষামাজা (টেম্পারিং) করে প্রকৃত নামের ওপর মো. বেলাল হোসাইন, বাবা মো. নাজিম উদ্দিনের নাম বসিয়ে তিনি রানীনগর উপজেলার ৫নং বড়াগাছা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগ লাভ করেন।

তখন থেকেই নিজের খেয়াল-খুশিমতো নিয়ম বর্হিভূত ও অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কাজী বেলাল অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করা সার্টিফিকেট দাখিল করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজীর) লাইসেন্স বাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও জানা যায়, রানীনগরের কাচারী বেলঘড়িয়া গ্রামের আজিজুল কাজীর মেয়ে রাহিমা বিবির সঙ্গে প্রায় ১৪ বছর আগে একই এলাকার রঞ্জনিয়া গ্রামের মোতালেব হোসেন মন্ডলের বিয়ে হয়। দম্পতিদের ৯ বছরের একটি ছেলে আছে। অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় প্রায় ৬ বছর আগে জর্ডানে পাড়ি জমান রাহিমা। তার পাঠানো টাকা দিয়ে মোতালেব জমিজমা কেনাসহ সংসারের ঋণ পরিশোধ করেন। এরই মধ্যে কথিত নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) পরিচয় দানকারী কাজী বেলাল হোসেন প্রবাসী রাহিমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। রাহিমা বিবি বিদেশে। অথচ গত বছরের ১৯ এপ্রিল নওগাঁ নোটারি পাবলিক কার্যালয় থেকে মোতালেবকে তালাকের জন্য এফিডেভিট করে নোটিশ পাঠানো হয়। স্বামীকে তালাকের এমন নোটিশ পেয়ে হতভম্ব হয় রাহিমার পরিবার। বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেকে বাঁচাতে ৯ আগস্ট বেলাল হোসেন নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে স্বাক্ষর ও সিল মোহরযুক্ত একটি প্রত্যয়ন রাহিমার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।

প্রত্যয়নপত্রে লেখা হয়, এই তালাক আমার অফিসে হয়নি বা তালাক করে নাই ইহা সত্য। যদি কেউ তালাকের কাগজ দেখিয়া থাকে বা কেউ তৈরি করে থাকে তা জাল ও ভুয়া। রহিমার ক্ষতি সাধনের জন্য করেছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাজী বেলাল হোসেন বলেন, আমার সকল কাগজপত্র সঠিক আছে। সকল সনদপত্রসহ কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া আছে।

আল-আমিন দাখিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষক ও প্রকৃত সার্টিফিকেট ধারী বেলাল উদ্দিন বলেন, বেলাল হোসেন পড়াশোনায় খুবই দুর্বল ছিল। সে দাখিল পরীক্ষায় ফেল করে। এরপর কোথায় পড়ালেখা করেছে তা আমার জানা নেই। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি সে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমার সনদপত্রগুলো সংগ্রহ করে। এ বিষয়টি আমি সেই সময়ের মাদরাসা সুপারসহ একাধিক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানালে তারা সেই বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা আমার জানা নেই। কারণ ২০০৫ সালে আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসি। তাই পরবর্তী বিষয়গুলো আমার জানা নেই।

নওগাঁ জেলা কাজী সমিতির সাবেক সভাপতি সামছুর রহমান বলেন, বেলাল হোসেন একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই। সাধারণ মানুষ বুঝতে না পেরে তাকে দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে থাকে। আমার এলাকায় এসে একবার বিয়ে পড়ানোর সময় হাতেনাতে আটক করি। সেবার তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যায়। বিষয়টি অনেকবার জেলা রেজিস্ট্রারকে অবগত করা হয়েছে।

নওগাঁ জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বড়গাছা ইউনিয়নে আমাদের সমিতিভুক্ত কাজী মোজাফ্ফর হোসেন থাকার পরও বেলাল হোসেন নিজেকে আসল কাজী দাবি করে। তিনি আমাদের সমিতিভুক্ত না। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাই।

নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি অবগত না।’