বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান দিলেন জি এম কাদের

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৭৮৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল বলে তথ্য দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ তথ্য দেন।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি যখন ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৭৮৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০০৭-২০০৮ সালে ২৫৬ জন, আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০১৮ সালে ১৩৫১জন, ২০১৯ সালে ৩৬২ জন এবং ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ২০৭ জনসহ মোট ১৯২০ জন।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় রাষ্ট্রীয় বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়। একথা বলার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর দায় এড়াতে পারে না। মহাজোটের পক্ষ থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।

অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত সকল হত্যার, সে যে নামেই হোক বন্ধের দাবি জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রথম ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট নামে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছিল। সে অভিযানের সময় সর্বপ্রথমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। সেই ধারা আজও চলমান।

জিএম কাদের বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যখন শুরু হয়েছিল, তখন এ কাজের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার মধ্য থেকে একটি বিশেষ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছিল (যৌথ বাহিনী, পরবর্তীতে র্যাব গঠিত হওয়ার পরে র্যাব) । যেসব ব্যক্তিবর্গ হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সমাজবিরোধী বা আইন ভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। বিচারকার্যে মামলা জট, অনিয়ম ও দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে দোষী ব্যক্তিরা বিচার এড়িয়ে যেতে পারতেন। ফলে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সে দিক দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রদান করছে এ ধারণা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। সাধারণ মানুষ সে কারণে বিষয়টিকে ততটা খারাপ বিবেচনা করতেন না। তবে আমরা সবসময় এর বিরোধিতা করেছিলাম। কেননা দ্রুততার সাথে বিচার কার্য সম্পন্ন করে সাজা কার্যকর করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারতো। সে জন্য বিশেষ আদালত গঠন বা অন্য কোনো আইনি কাঠামোর মাধ্যমে এটি করা সম্ভব ছিল।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় আইন-শৃঙ্খলা বা কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী এর সাথে যুক্ত নয়। সেক্ষেত্রেও কিন্তু রাষ্ট্র বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দমন করা ও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা তাদের দায়িত্ব। বেআইনি কাজ বন্ধ করতে প্রয়োজন আইনি ব্যবস্থা। বেআইনি কাজ বেআইনিভাবে মোকাবিলা করা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী। এ ধরনের ব্যবস্থা সম্বলিত সমাজকে সভ্য সমাজ বলা যায় কিনা বিবেচনা করা দরকার। সে কারণে আমরা সব সময় এর বিরোধিতা করেছিলাম।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছিল। পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছিল। জাতীয় পার্টি ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে জোটগতভাবে নির্বাচন করেছিল। তখন মহাজোটের পক্ষ থেকে ৯ম সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়েছিল।