পটুয়াখালীতে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেল সন্তানরা

শেয়ার করুনঃ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ৬০ বছরের অধিক বয়সি বৃদ্ধা জয়নব বিবি। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বড় করেছেন এক ছেলে ও মেয়েকে। স্বপ্ন ছিল সন্তানরা বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে মাকে আরাম আয়েশে রাখবেন। জয়নবের সংসারের আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো ছিল না। নিজেদের অবস্থান থেকেই সন্তানদের জীবনের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সন্তানরদের অসুখ হলে তারা কান্ন করত। মা রাতে জেগে সেবা করতেন ও চোঁখের পানি ফেলতেন। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই এখন বড় হয়েছেন। দুজনেই সুস্থও আছেন বটে। তারা এখন আর কান্না করেনা। ছেলে বিয়ে করেছেন আর মেয়েরও বিয়ে হয়েছে। তাদের এখন সেবা করার অনেকে আছে।

জয়নব বিবি বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু জয়নবের কান্না এখনও থামেনি। কারণ তিনি অসুস্থ্য হয়ে সন্তানদের কাছে বোঝায় পরিনত হয়েছেন।

ছোট বেলায় মা জয়নবের বুকে সন্তানদের ঠাই হলেও সন্তানের বুকে মায়ের ঠাই হয়নি। বয়স্ক বৃদ্ধা মাকে ছেলে ও ছেলের বউ রাস্তায় ফেলে গেছেন। তাই তিনি অঝড়ে চোঁখের পানি ফেলেন। দীর্ঘদিন দুই মাসের অধিক সময় ধরে রাস্তায় পরে থাকলেও খোঁজ নেননি সন্তানরা।

বলছি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের জয়ঘোড়া গ্রামের আলউদ্দিন আকনের স্ত্রী জয়নবের কথা।

বৃদ্ধা জয়নব বিবি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। বিছানায় বসেই খাবার খান আর বিছানাতেই মল ত্যাগ করেন। তাই মায়ের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমিক ছেলে মো. আরিফ ও ছেলে বউ মোসা. কুলসুম বিবি এক অটো ড্রাইভারের মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েক মাস আগে দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষীপুরের টিটিসি ট্রেনিং সেন্টার এলাকার সড়কে ফেলে যান। উঠতে ও বসতে পারেননা তিনি। বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলেন তিনি। আবার যেখানেই খাচ্ছেন সেখানেই মল ত্যাগ করছেন তিনি। গন্ধে সহজে কেউ কাছে ভিড়তে চাননা তার।

এ ঘটনায় বুধবার স্থানীয় মোশারফ হোসেন নামে এক যুবক ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে দৈনিক যায়যায়দিনের দশমিনা প্রতিনিধি ও দশমিনা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন তানভীরের। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। সেই সাথে তিনি ওই বৃদ্ধাকে খাবার কিনে দিয়ে আসেন। পরে তিনি গতকাল দশমিনা থানার মানবিক ওসি মো. জসিমকে জানান।

ওসি মো. জসিম সংবাদকর্মী মো. মামুন তানভীরকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ওসি নিজে উদ্যোগী তার সহকর্মী এস আই মো. ইমানুল ইসলাম ইমন, এসআই মো. মেহেদি হাসান ও সাংবাদিক মামুন তানভীরকে নিয়ে সঙ্গে নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজ হাতে গোসল করান। কিনে দেন নতুন কাপড়। খাবারও কিনে দেন। পরে পরম যত্নে ও মমতা দিয়ে পুলিশের ভ্যানে দুপুরের দিকে দশমিনা হাসপাতালে ভর্তি করান তাকে। বর্তমানে দশমিনা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এ কাজে দশমিনার সমকাল প্রতিনিধি রিপন কর্মকার ও ভোরের পাতা প্রতিনিধি মো. সাফায়েত হোসেনও সহযোগীতা করেছেন। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য ফ্রিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেন।

ওই এলাকার মো. সহিদুল মৃধা জানান, স্থানীয় কয়েকজন মিলে বৃদ্ধাকে ওই এলাকার রাসেল নামে একজনের দোকানে এক মাস থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু বৃদ্ধা অসুস্থ ও থাকার স্থানেই মল ত্যাগ করেন বলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।

মোসা. সাথী বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, তিনিসহ এলাকার বেশ কয়েকজন মহিলা দীর্ঘ দুই মাস ওই বৃদ্ধাকে মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যান। কিন্তু মলের গন্ধের কারণে অনেকে কাছে যেতে চাননা। রাস্তার পাশে পরে থেকে কান্না করে দিন কাটান।

বৃদ্ধা জয়নব বিবি জানান, রুনা নামে তার এক মেয়েকে তিনি দশমিনা উপজেলার পশ্চিম আলীপুরা বিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার মেয়ের সাথে থাকতে চান। ছেলের কাছে ফিরতে চাননা তিনি। তবে সেই মেয়েও নাকি খোঁজ খবর নেয়নি। মাটিতে শুয়ে থাকায় পিপড়ের কামড়ে অনেক কষ্ট হত বলে কেদে ফেলেন।

তবে এ বিষয় বৃদ্ধা জয়নব বিবির কোন স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ওসির এ মানবিক কর্মকান্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিভিন্নমহল।

দশমিনা থানার ওসি মো. জসিম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় মানুষের জন্য কাজ করে। ভালো কাজ করতে পারলে সব সময় ভালো লাগে। আমি নিয়মিত ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর রাখছি। আমি সব সময় তার পাশে আছি। তিনি সুস্থ হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।