শিশু তানিয়াকে বরিশাল নদী বন্দরে ফেলে পালিয়ে গেল সৎভাই

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: মামা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বরিশাল নদী বন্দরে তাসমিয়া আক্তার তানিয়া নামে ১০ বছরের এক শিশুকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে সৎ ভাই মনির(২৫)। পরে শিশু তানিয়াকে মো. সুমন হাসান নামক এক তরুণ ফটোসাংবাদিকের সহায়তায় উদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশাল শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সংলগ্ন ছাড়া কুটির এলাকার বাসিন্দা ও তরুণ ফটোসাংবাদিক সুমন হাসান জানান, শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ ধরে ভাইয়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে কাঁদছিল শিশুটি।

পরে সে নদীবন্দর এলাকা থেকে কাঁদতে কাঁদতে তাদের এলাকায় আসেন। ওইসময় তার বোন বিষয়টি দেখতে পেয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচেনা করে শিশুটিকে তার জিম্মায় রাখেন।

সুমন হাসান বলেন, বিষয়টি জানান পর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজকে তানিয়ার কথা জানাই। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সন্ধ্যায় তানিয়াকে শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়।

তাসমিয়া আক্তার তানিয়া নামের শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার সৎভাই মনির কোনো এক লঞ্চে বাবুর্চির কাজ করেন। সে শিশু তানিয়াকে তার মামা বাড়ি সিলেটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বরিশাল নদী বন্দরে আনেন। তার হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চিপস কিনে খেতে বলে লঞ্চের টিকেট আনতে যায় মনির। কিন্তু অনেক সময় অপেক্ষার পরও মনির ফিরে না আসায় শিশুটি বিভিন্ন জনের কাছে তার ভাইয়ের খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু ভাইয়ের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় সে কাঁদতে শুরু করে এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে।

শিশু তানিয়া জানায়, সে পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের মাহমুদকাঠী গ্রামের সালাম তালুকদারের প্রথম স্ত্রী মনি বেগমের সন্তান। ৪ বছর আগে শিশুটির মা মনি বেগম মারা গেলে বাবা শিমু বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। বাবা সালাম ঢাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন। তানিয়া তার সৎ মা ও ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকতো এবং স্থানীয় ৩৭ নম্বর মাহমুদকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। তবে বাবা ঢাকা থাকায় প্রায়ই তার সৎ মা ও ভাই তাকে নির্যাতন করে এবং শনিবার নানা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে মনির তাকে সড়ক পথে বরিশাল নদী বন্দরে নিয়ে আসে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানান, সুমন হাসান শিশু মেয়েটিকে কুড়িয়ে পেয়ে তাকে খবর দেয়। তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে জেলা প্রশাসককে জানান । এরপর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান শিশুটির সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব নেবেন।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক বাসুদেব দেবনাথের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে শিশুটির ভরণ পোষণ, লেখাপড়া এবং পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে। আর পরবর্তীতে পরিবারের কেউ নিতে চাইলে আইনানুগভাবে নিয়ম মেনে তাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত সৎ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।