সাংবা‌দিক অপূর্ব অপুর ওপর হামলার মামলায় ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: ব‌রিশালে সময় টে‌লি‌ভিশনের ব‌্যুরো প্রধান ও সি‌নিয়র রিপোর্টার অপূর্ব অপুর ওপর হামলা সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই ঘটেছে বলে নি‌শ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকা‌রী কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পু‌লিশ।

এবার এ ঘটনায় জ‌ড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শা‌স্তি দা‌বি করেছেন সাংবা‌দিক নেতারা।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কয়েক আসামিকে গ্রেফতার হলেও মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পু‌লিশ। তারা জামিন নিয়ে বাইরে আছে। আমরা চাই মহামান্য আদালত সব আসামিদের শাস্তির আওতায় আনুক।

বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, অপুর ওপর হামলার ঘটনার শুরু থেকেই আমরা দেখেছি প্রভাবশালী একটি মহল ও প্রশাসন ঘটনাটি গুরুত্ব দিতে চায়নি, তবে আমরা মাঠে ছিলাম। অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হলো অপুর ওপর সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই এই হামলা।

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার বলেন, মূল ধারার সাংবাদিকদের সব সময় টার্গেট করে হামলা করা হয়। এটা শুধু বরিশাল নয়, সারা দেশেই হচ্ছে। আর প্রভাবশালী মহলের চাপে অনেক সময় এসব মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না। তবে আমরা অপুর পাশে ছিলাম ও আছি। এই মামলায় যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, এখন আদালতের কাছে আমরা ন্যায় বিচার দাবি করছি।

সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, অপুর ওপর হামলার বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই পাশে ছিলাম। এ ঘটনায় আমাদের অনুমানই সত্যি হলো। সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই অপুর ওপর হামলা হয়েছে, তদন্তে এমনই উঠে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি আদালত প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল আসামীকে শাস্তির আওতায় আনবেন।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক ছানোয়ার হোসেন জানান, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক অপুর্ব অপুকে হেনস্থা করতেই এই হামলা করা হয়। তবে অপহরণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত করে ২০ নভেম্বর সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আসামী নুরে আলম হাওলাদার মামলার অন্য আসামী হাবিবুর রহমান ওরফে ট্যারা হাবিবকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিক অপুর্ব অপু সময় টেলিভিশনের অফিসে যাচ্ছে- তা দেখিয়ে দেয়। তখন মামলার ৬ নম্বর আসামী হাবিবুর রহমান একটি রিকশাযোগে কোতয়ালি মডেল থানাধীন নগরীর শীতলাখোলা এলাকার অপুর্ব অপুর পথরোধ করে এবং তার ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এতে ভয়াত্মক পরিস্থিতি তৈরি হলে অপু আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী গফুর সড়কের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন সেখানে অবস্থানরত মামলার ১ নম্বর আসামী জিহাদুল ইসলাম জিহাদ সাংবাদিক অপূর্ব অপুর হাত ধরে। তখন অপু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পুনরায় দৌড়ে চলে যান।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায়, আসামীরা বেআইনী জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগশাজসে ৭ নম্বর আসামী শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের পরিকল্পনায় এবং আসামী নুরে আলম হাওলাদারের ইশারায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামী জিহাদুল ইসলাম জিহাদ এবং হাবিবুর রহমান বাদীর পথরোধ করে সাংবাদিক অপুকে ভয়ভীতি হুমকি দেয় এবং হাবিবুর রহমান অপুকে মারধর করে বলে তদন্তে উঠে আসে।

মামলার ২ নম্বর আসামী মামুন সিকদার ওরফে সিডা মামুন, ৩ নম্বর আসামী নুরুল মোমেন কোটন, ৬ নম্বর আসামী হাবিবুর রহমান ও ৭ নম্বর আসামী শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালের বিভিন্ন থানায় মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা প‌রিদর্শক ছানোয়ার হোসেন আরও জানান, ২০২২ সালের ২৯ মে বিকেল সাড়ে ৩টায় সময় টিভির বরিশাল অফিসে যাওয়ার পথে ব্যুরো প্রধান অপূর্ব অপুর উপর হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর সাংবাদিক অপু বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে প্রথমে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় কোতয়াললি থানার সাব ইন্সপেক্টর সাইদুর রহমান। এরপর দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা শাখার প‌রিদর্শক হরিদাস নাগ। সবশেষে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। এ কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমি পুরো ঘটনাটি বার বার তদন্ত করেছি। প্রতিবারই উঠে এসেছে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এই ঘটনা ঘটনোর কথা। তবে অপূর্ব অপুকে অপহরণ চেষ্টার কোনো প্রমাণ আমি পাইনি। চার্জশিট বা অভি‌যোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। সাক্ষ‌্য গ্রহণ শেষে আদালত বিচার করবেন।

এ বিষয়ে ব‌রিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক অপূর্ব অপুর মামলার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। বারবার আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সেই হামলা হয়েছে বলে আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় আমরা কয়েক আসামিকে গ্রেফতার করেছি। আবার অনেককে করতে পারিনি। তবে যারাই এই মামলার আসামি তাদের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, অপূর্ব অপুর উপর হামলার ঘটনায় মামলা দা‌য়ে‌রের পর পু‌লিশ বেশ ক‌য়েকজন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি‌লো। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ব‌রিশালসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করে‌ছিলো সাংবা‌দিকরা।