নিজস্ব প্রতিবেদক ::: পটুয়াখালী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই সম্ভিত রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভূক্তভোগীর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- নিরাপরাধীকে অপরাধী সাজানো, ভুল তথ্যে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা ইত্যাদি।
২০০৪ সালে মাগুরা জেলার বাসিন্দা চৈতন্য রায়ের ছেলে সম্ভিত রায় বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন কনেষ্টবল হিসেবে। পরবর্তিতে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ কনেষ্টবল থেকে এএসআই পরে এসআই হন। সেই সাথে বাড়তে থাকে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। কিন্তু সম্বিত রায় এই বিষয়ে খুবই কৌশলী অবৈধভাবে আয় করা অর্থ সিংহভাগ পাচার করেছেন ভারতে এমনটাই অভিযোগ সহকর্মীদে।
বর্তমান কর্মস্থলে একই সাথে চাকুরিরত একাধিক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- এসআই সম্ভিত রায় যা আয় করে প্রতিদিনের কালেকশন প্রতিদিনই বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন ভারতে। সে ঝিনাইদহ থাকতে গুরুতর অপরাধের দায়ে দুই বছরের বিভাগীয় শাস্তির মুখে পরেন এবং সেখানে একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ছিল পরে ক্ষমতা এবং অর্থের মাধ্যমে সেই মামলা সমঝোতা করেন। সেখান থেকে কলাপাড়া থানায় এসে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড হয়ে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত হয়। পরবর্তিতে তদবির করে পটুয়াখালীর গোয়েন্দা শাখার মত স্পর্শকাতর একটি ইউনিটে পোষ্টিং নেয় সম্ভিত। এরপর কিছুদিন নিরব ভূমিকায় থাকলেও জেলা ডিবির ওসি আজমল হুদা ওসি হিসেবে পটুয়াখালী গোয়েন্দা বিভাবে যোগদান করার পরপর ব্যাপক বেপরোয়া হয়ে ওঠে এসআই সম্ভিত। কারণ মাগুরা জেলায় ওসি আজমল হুদার সাথে চাকুরি করেছিলেন এসআই। সেই সুবাধে ওসির বেশ স্নেহধন্য ছিল সম্বিত রায়।
তারা আরও বলেন- আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন সম্ভিত কলাপাড়া কোর্টের ৭০ ভাগ মামলার তদন্ত একাই করেন। এমনকি বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলা ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দেয় ওসির সহায়তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- সম্ভিত রায়ের সাথে চরপাড়ার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মাদক বেচাকেনা ও সহায়তায় করেন তিনি। টাকার বিনিময় বিভিন্ন পাতানো মাদক উদ্ধারসহ বিস্তর অভিযোগ সম্ভিতের বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহায়তায় এই অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন এসআই সম্ভিত। তার এই অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ মূখ খুললে বা অভিযোগ করলে হায়রানি করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয় সম্ভিত। কেউ অভিযোগ করলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন কর্মকর্তাদের।
জানা যায়- ২০২৩ সালে কুয়াকাটায় রাখাইন পল্লীতে হেমাতি রাখাইনের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়ে অপর পক্ষকে ফাঁসাতে ১ কেজি ওজনের একটি গাঁজার ব্যাগ ফেলেন লুনা রাখাইনের বাসায়। তারা শব্দ পেয়ে চিৎকার চেচামেচি করলে স্থানীয় জনতা ও সাংবাদিকদের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে সম্ভিত ও তার সহযোগী এএসআই নাজমা এবং এএসআই সাইদুল। ওই ঘটনার পরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ হলে এসআই সাইদুলকে অন্যত্র বদলি করলেও অদৃশ্য কারনে বদলি হয়নি নাজমা ও সম্ভিত। একই বছরে এসআই সম্ভিত রায় চায়না সিকো কম্পানির দোভাষী তরুণ উদ্ভাবক ও প্রকৌশলী মোঃ জিসান হাওলাদারকে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে অর্থের বিনিময়ে একটি পাচঁ তারকা হোটেল থেকে পাতানো অভিযানের মাধ্যমে পকেটে টাকা দিয়ে তৃতীয় তলায় বসে গ্রেপ্তার করে নিচতলায় পুরাতন রিসিপশনে নিয়ে এসে সেখানে বসে মামলা সাজান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ওই মামলার বাদী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিপুল পরিমান ডিজেল চুরির ঘটনা ঢাকতে মোটা অংকের টাকার বিনিময় সম্ভিত রায়ের পরিকল্পনায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় উদিয়মান পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানী সাশ্রয়ী গাড়ী আবিষ্কারক এই তরুণ বিজ্ঞানীকে। আর জিসানের বিরুদ্ধে কোন জিডি বা অভিযোগ করেনি বাদী মহসিন। এদিকে ভূয়া অভিযান পরিচালনা করে জিসানকে গ্রেপ্তার করে সম্ভিত। পরে সম্বিতের পরামর্শে ১২ ঘন্টা পরে বাদী উপরস্থ প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় উপস্থিত প্রতক্ষদর্শী ও হোটেল কর্তৃপক্ষের কাউকে সাক্ষী না নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকা বাদীর ম্যনেজার ও পার্টনারদের স্বাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়।
এ বিষয়ে এসআই সম্ভিত রায়ের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন- এ সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আপনি আমার অফিসে এসে খোঁজ নেন বলেই কলটি কেটে দেন।
সম্ভিত রায় একই স্থানে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা ও তার নানাবিদ অপরাধের বিষয়টি জানতে চাইলে ডিবি ওসি আজমল হুদা বলেন, রাখাইনেদের বিষয়টি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
একই স্থানে দীর্ঘদিন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন- ২২ মাস এর বেশী থাকা যাবেনা এমন কোন দলিল আছে? তিনি উদাহরন টানেন সোনাডাঙ্গার ওসি ছয় বছর ধরে একই কর্মস্থলে আছে আপনারা তাকে কেন প্রশ্ন করছেন না।