বরিশাল সিটি নির্বাচন : বিএনপির কেউ নন রুপণ, তবুও বহিষ্কারের সুপারিশ

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান ওরফে রূপণ ‘বিএনপির কেউ নন’ বলে দাবি করে আসছিলেন দলের নেতারা। অথচ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের যে তালিকা তৈরি করেছে নগর বিএনপি সেখানে রয়েছে সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপণের নাম। এই তালিকা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে পাঠিয়ে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

নগর বিএনপি সূত্র জানায়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক নেতার নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আরও দুজনের নাম তালিকায় যুক্ত হবে। এদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি হিসেবে বহিষ্কারের সুপারিশ করে তালিকার সঙ্গে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

কামরুলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রোববার রাতে নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তাঁকে আপনারা টেনে এনে গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন কেন? তিনি আমাদের দলের কে? তাঁকে কোনো দিন বরিশালের রাজনীতির অঙ্গনে কেউ দেখেছে? তাঁর ব্যপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তো কোনো বিষয় নেই।’

নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা পাঠাইনি, কেন্দ্রই তালিকা করেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।’

নগর বিএনপির আহ্বায়ক তালিকা করার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও দলটির একাধিক নেতা বলেছেন, ১৯ জনের একটি তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কামরুল আহসানের নামও আছে। এই নেতারা বলছেন, তবে তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়। সেখানে আরও দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে। তাঁরা হচ্ছেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের (১৬, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড) প্রার্থী ও নগর বিএনপির সাবেক সদস্য মজিদা বোরহান এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নগর বিএনপির সাবেক সহশিশুবিষয়ক সম্পাদক ইউনুস মিয়া।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপণ বলেন- আমি বিএনপি করি কি না, সেটা তাঁরাই প্রমাণ করে দিয়েছেন তালিকায় আমার আমার নাম উঠিয়ে।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিদুর রহমান আজ সোমবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা ১৯ জনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে মেয়র পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে কামরুল আহসানের নাম রয়েছে।’

কামরুল বিএনপির কেউ নয় বলে দাবি করা হচ্ছে, তারপরেও কেন তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুর রহমান বলেন, কামরুল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এই পদের কারণে তাঁর নাম এসেছে।

কামরুল আহসানের বাবা আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বরিশালে বিএনপির একটি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে। দলের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কামরুল আহসানের পাশাপাশি বিএনপির বর্তমান ও সাবেক অন্তত ২০ জন নেতা কাউন্সিলর পদে মাঠে আছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর। বাকিরাও এলাকায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে এসব কাউন্সিলর প্রার্থীদের তাগাদায় বিএনপি–মনা ভোটারেরা কেন্দ্রে গেলে কামরুল আহসান মেয়র পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন বলে ভোটের মাঠে আলোচনা আছে।

বহিষ্কারের সুপারিশের জানতে চাইলে কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি “বিএনপি করি না, বিএনপির কে” সেই প্রশ্ন যাঁরা করছেন, তাঁরা আসলে না বুঝেই করছেন। এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে আমি বিএনপি করি কি না, সেটা তাঁরাই প্রমাণ করে দিয়েছেন তালিকায় আমার আমার নাম উঠিয়ে।’

তালিকায় আরও যাঁদের নাম

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যে সব বিএনপি নেতারা এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এদের মধ্যে তিনজন নগর বিএনপির বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। চারজন একই কমিটির সদস্য। অপর ১৩ জন ওয়ার্ড বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতা।

তাঁদের মধ্যে একমাত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান। বাকিরা কাউন্সিলর প্রার্থী। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নগর বিএনপর তিন যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হারুন অর রশিদ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ মো. আমিনুল ইসলাম। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম হাওলাদার, সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাশিদা পারভীন। দলীয় পদধারী অন্য নেতারা হচ্ছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব জিয়াউল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম, কাজী মোহাম্মদ শাহীন ও ছাত্রদলের জেলার সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের আবদুল্লাহ সাদি।

পদ না থাকলেও সাবেক নেতাদের মধ্যে আছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে ফারুক, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সিদ্দিকুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জেসমিন সামাদ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে হুমায়ন কবির ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খায়রুল মামুন। এর বাইরে সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক সদস্য মজিদা বোরহান ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক সহশিশুবিষয়ক সম্পাদক মো. ইউনুস মিয়ার নাম যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।