জগদীশ সারস্বত স্কুলের শতবর্ষী পুকুর ভরাট, ভিডিও কাভারেজের সময় সাংবাদিকের উপর হামলা!

শেয়ার করুনঃ

তুফান মাহমুদ ::: বরিশাল নগরীতে শতবর্ষী একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। সারা দেশে পুকুর ও জলাশয় ভরাটে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতের আঁধারে বালু ও মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরিশাল নগরীর কলিবাড়ী রোড এলাকায় জগদীশ সারস্বত স্কুলের শতবর্ষী পুকুর ভরাট করছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাওসার হোসেন। খরব পেয়ে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গতকাল রাতে ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলে পুকুরটি ভরাট করছিলো ওই স্কুলের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাওসার হোসেন, সে সময় পুকুরটি রক্ষায় স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক ও কোতোয়ালি থানার এ এস আই আব্দুর রাজ্জাকসহ সঙ্গীয় ফোর্স। ঠিক সেই সময় উপস্থিত হন বরিশাল মহানগর যুবলীগের আহবায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজে বাঁধা দিয়ে বলেন, দল এখনো ক্ষমতায়। আমি নতুন মেয়রের লোক। আমার সাথে পোলাপান আছে। এখান থেকে কাউকেই নিতে পারবেন না। বর্তমান ডিসি আমার পেয়ারের লোক। আমি একটা ফোন দিলে আপনার কিছু করার ক্ষমতা নেই। এভাবেই আইনের কাজে বাঁধা দিয়ে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, আব্দুল মালেকের উপরে চটলেন। তখন উপস্থিত ছিলেন বরিশালের স্থানীয় পত্রিকার সংবাদকর্মীরা। নিজামুল ইসলাম নিজামের এসব কথার ভিডিও করার সময় তিনি বরিশাল থেকে প্রকাশিত আজকের তালাশের ফটো সাংবাদিক গোলাম রাব্বিকে আঘাত করে ক্যামেরা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় থাবা দেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ সময় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পরে তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, আমার পোলাপান আনাইলে একজনকেও যেতে দিবোনা। তবে এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা জানান ভিন্ন কথা। তাদের ধারণা- নিজামুল ইসলাম নিজামকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করার কারনে তিনি এরকম হুমকি ধামকি দিচ্ছে। কাউকে তোয়াক্কা করছেনা। এ সময় জলাধার আইন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করার অপরাধে মাটির ট্রাকের ড্রাইভার ও শিক্ষক কাওসার হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে জব্দ করা ট্রাকটিও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা শুনেছি মোটা অংকের টাকা খেয়েছে নিজাম ভাই। যদি তাই না হয় তবে তিনি কেনো সাংবাদিক ভাইদের উপর হামলা করবে। আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিবে। অভিযুক্ত শিক্ষককে নিতে বাঁধা দেয়ার কারন নিজাম ভাইয়ের নাম সামনে চলে আসবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কাওসার হোসেন বলেন, এই পুকুরে অনেক শিক্ষার্থী পরে দূর্ঘটনা ঘটেছে তাই ভরাট করেছি। নিজাম ভাইকে আমি ফোন দিয়েছি তাই এসেছে। তবে আমি তাকে নির্দেশ দেইনি সাংবাদিকদের উপর হামলা চালাতে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, স্কুলের শিক্ষক কাওসার হোসেনকে ২০ জুন নির্দেশ দিয়ে গেছি কাজ না করতে। তাকে পুকুর ভরাটের অনুমতির কাগজ দেখাতে বলেছি। কিন্তু সে আইনকে অমান্য করে আজকে আবার কাজ করছে তার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সত্যতা পেয়ছি। তাই তিনি, গাড়ীর ড্রাইভার ও গাড়ী আটক করে থানায় নিয়েছি। এই অপরাধের আইন অনুযায়ী ম্যাজিষ্ট্রেট শাস্তি দিবেন। তবে কাজ করতে এলে বাঁধার মুখে পরতে হয়। তিনি নিজাম বা যেই হোক আমি আমার আইনের কাজ করবো।

সাংবাদিকদের উপর হামলা ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে নিজামুল হক নিজামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।