তালতলীতে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে নারী

শেয়ার করুনঃ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি :: বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের রোজিনা আক্তার নামের এক নারী উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক মোঃ হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পরেছেন। মামলা তুলে নিতে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছেন যুবলীগ নেতা। স্বাক্ষিরা তার ভয়ে স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন না। তদন্তকারী কর্মকর্তা তালতলী থানার এসআই গোলাম সরোয়ার মামলার আসামী যুবলীগ নেতাকে সাথে নিয়ে মামলা তদন্ত করছেন। এতে স্বাক্ষীরা যুবলীগ নেতার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। দ্রæত তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার।

শনিবার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে রোজিনা আক্তার বলেন, উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের রোজিনা আক্তার পারিবারিক কাজে গত ৮ সেপ্টম্বর তালতলী উপজেলা শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তায় মনিকা সাতক্ষীরা দধি ঘরে বসে তার পরিচিত জলিল নামের একজনের সাথে কথা বলছিলেন। ওই সময় তালতলী উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লার সহয্গোী শ্রী সাগর ও সাগর মিয়া নামের দুই বখাটে এসে মোবাইলে তাদের ছবি ধারন করে। ওই সময়ে রোজিনা তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করলে ক্ষেপে যান সাগর ও তার আরেক সহযোগী সাগর মিয়া। এক পর্যায় তারা ওই নারীকে মারধর শুরু করে। এর কিছুক্ষণ পরই যুবলীগ নেতা কামাল মোল্লা এসে ওই নারীকে টেনে হেটড়ে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে বেধরক মারধর করে। নারীর ডাক চিৎকারের শত শত লোক এসে জমা হয় কিন্তু মুর্তিমান আতঙ্ক যুবলীগ নেতার ভয়ে কেউ ওই নারীকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। ওই নারীকে মারধর শেষে রাস্তায় ফেলে চলে যান যুবলীগ নেতা। পরে স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। মামলার বাদী রোজিনা আক্তার শনিবার আমতলী সংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় একজনের সহযোগীতায় থানায় যান। পুলিশ তাকে সহযোগীতা না করে উল্টো কামাল মোল্লার পক্ষাবলম্বন করে। পুলিশ তাকে সারা রাত থানার আসামী সেলে আটকে রাখে এবং তাদের ইচ্ছা মাফিক অভিযোগপত্র লিখে তার স্বাক্ষর নিয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ তাদের ইচ্ছা মাফিক স্বাক্ষী রেখেছেন। এ ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ প্রধান আসামী সাগর ও যুবলীগ নেতা কামাল মোল্লাকে গ্রেফতার করছে না। আসামীরা প্রকাশ্যে পুলিশের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নিতে বাদী রোজিনা আক্তারকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ গোলাম সরোয়ার মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা তদন্তে আসামী যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লাকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্ত করছেন। এতে কামলা মোল্লার ভয়ে স্বাক্ষীরা স্বাক্ষ্য দিতে সাহস পাচ্ছে না। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী কামাল মোল্লাকে মামলা থেকে অব্যাহতি ও মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এমন তদন্ত করছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের নামে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছেন।

তিনি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম সরোয়ার তদন্ত করলে আমি সুবিচার পাব না বলে প্রতিয়মান হয়। দ্রুত তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের দাবী জানাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক কালাম মোল্লাকে নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম সরোয়ার ঘটনাস্থলে এসে প্রকাশ্যে দেখা স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য নিচ্ছেন। কামাল মোল্লা সাথে থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে সাহস পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মামলার এজাহার নামীয় এক স্বাক্ষী বলেন, কামাল মোল্লার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে আমাকে এক নেতা বারন করেছেন।

তালতলী উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান কামাল মোল্লা মামলা তুলে নিতে বাদীকে জীবন নাশের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এটা আইনগত ভাবে মোকাবেলা করবো। আমি বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে আছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম সরোয়ার বলেন, বাদীর আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি যদি চার্জসিট থেকে কামাল মোল্লাকে অব্যাহতি দিতাম তাহলে এমন অভিযোগ দিতে পারতেন। তিনি আরো বলেন, বাদী রোজিনাকে আসামীর সেলে রাখা হয়নি তাকে ডিউটি অফিসারের কক্ষে তার মায়ের সাথে রাখা হয়।

তালতলী থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, দ্রুত মামলার চার্জসিট দেয়া হবে। তবে বাদীর অভিযোগ ভিত্তিহীন।