বরিশালে ড্রামের ভেতর পাওয়া সেই লাশটি গৃহবধূ সাবিনার

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসট্যান্ডে ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম সাবিনা ইয়াসমিন (৩৪)।

তিনি বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর এলাকার সাহেব আলীর মেয়ে এবং গৌরনদী পৌর শহরের দিয়াসুর এলাকার বাসিন্দা কাতার প্রবাসী শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের স্ত্রী।

স্বামী কাতারে থাকায় সাবিনা ইয়াসমিন তিন সন্তান নিয়ে নারায়গঞ্জের ফতুল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে গৌরনদীর ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে অভ্যন্তরীণ রুটের পিএস ক্লাসিক পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে ড্রামের ভেতর সাবিনা ইয়াসমিনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার আগেই বাস থেকে পালিয়ে যান ড্রামের সঙ্গে থাকা এক পুরুষ যাত্রী। মৃতদেহ উদ্ধারের পর নাম-পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদঘাটনে গৌরনদী থানা পুলিশের ওসি আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য তৎপরতা শুরু করেন। ২০ ঘণ্টার মধ্যে তারা অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ নাম-পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হন।

শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নিহত সাবিনা ইয়াসমিনের মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার দেবর মনির হাওলাদার।

দেবর মনির হাওলাদার জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে সন্তানদের নিয়ে শুক্রবার সকালে গৌরনদীতে আসেন তার ভাবি সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর সকাল ১০টার দিকে তার ফোনে একটি কল আসে। ফোনে কথা বলার পর সন্তানদের রেখে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
গৌরনদী থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কাজ শুরু করে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই দলটি বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। তদন্তের একপর্যায়ে তারা ওই নারীর পরিচয় উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

তদন্তে জানা গেছে, নিহত নারী সাবিনা ইয়াসমিন ও কাতার প্রবাসী তার স্বামী শহিদুল হাওলাদারের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার জন্য গৌরনদীর মাহিলাড়া এলাকার খালেক হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি প্রায় ১০ মাস আগে চার লাখ টাকা দেন। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। পরে এ কারণে খালেক হাওলাদার বিদেশে যেতে অসম্মতি জানালে সাবিনা সম্প্রতি তাকে (খালেক) দেড় লাখ টাকা ফেরত দেন।

শুক্রবার সকালে খালেক হাওলাদার ফোনে কল করে কৌশলে সাবিনাকে ডেকে নেন। এরপর রাতে বাসে একটি ড্রামের ভেতর থেকে সাবিনার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারালো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে সাবিনাকে হত্যা করা হয়। এরপর একটি প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে বাসে করে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১১টার দিকে খবর পেয়ে গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসট্যান্ডে ড্রামের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর ওই নারীর নাম-পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা শুরু করা হয়। সকালে হাসপাতালের মর্গে থেকে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়। পরে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপর হত্যার রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নেয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০ ঘণ্টার মধ্যেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। তবে আসামি কে এ বিষয়ে গ্রেফতারের স্বার্থে এখনই বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না।’