বরিশালে স্কুলশিক্ষিকার বাড়ি দখলের পায়তারায় লিপ্ত এসআই রিয়াজ!

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিতর্ক যেনো কিছুতেই পিছু ছাড়ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের। সপ্তাহ দুয়েক পূর্বে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মর্যাদার এক কর্মকর্তার নির্যাতনে শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে বাহিনীর ভুমিকা নানান প্রশ্নে দেশময় আলোচনা-সমালোচনায় তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরেকটি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসলেন বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় কর্মরত অনুরুপ মর্যাদার এক কর্মকর্তা। এসআই রিয়াজ উদ্দিন নামের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের এক স্কুলশিক্ষিকার ভবন পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে জোরপুর্বক দখল রাখা। এবং গত ৭/৮ মাস ধরে ভাড়া পরিশোধ করা তো দূরের কথা, এখন বাসা মালিক স্কুলশিক্ষিকা মমতাজ বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব নারীকে বাড়ি ছাড়া করার পায়তারায় লিপ্ত হওয়ার। পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারসহ অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে বিষয়টির প্রতিকার এবং সুবিচার চেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে আর্জি রেখেছেন স্কুলশিক্ষিকা।

এসআই রিয়াজের এই দখল প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের হলেও বিষয়টি এতদিন আলোচনায় আসেনি বা বাসা মালিক আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলেননি। সর্বশেষ পুলিশ কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতায় ওষ্ঠাগত হয়ে স্কুলশিক্ষিকা সোমবার পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এবং স্বল্পসময়ের মধ্যে অভিযোগের কপি মিডিয়াপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের হাতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যুর অভিযোগের মাঝে নতুন করে কোতয়ালি পুলিশের এসআইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করা নিয়ে পুলিশের শীর্ষমহলে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে, অনেকে রীতিমত বিব্রতও।

অভিযোগে নারী উল্লেখ করেন, পুলিশ কর্মকর্তা রিয়াজ বছর দুয়েক পূর্বে তার সাথে ৮ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে বাসায় ওঠেন। এক বছরের অধিক সময়ে যথারীতি ভাড়া পরিশোধ করলেও গত ৭/৮ মাস পুর্বে তিনি তা বন্ধ করে দেন। এবং প্রথমদিকে ভাড়া চাইতে গেলে বলতে শুরু করেন বিদেশে থাকা আপনার মেয়ে মনজিলা সুলতানা দেওয়ানের দেবর আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা হয়েছে। এর পরে আর ভাড়া পরিশোধ করেনি। এবং অপর ভাড়াটিয়াদের ভাড়া পরিশোধ করতে নিরুৎসাহিত করে। এর প্রতিবাদ করায় পুলিশ কর্মকর্তা নারীকে ভয়ভীতি দেখানোসহ কখনও কখনও বাসাটি তার বলে বিভিন্নজনের কাছে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। এমনকি ভবনের এক ভাড়াটিয়া সুমনা বড়ালের কাছ থেকে ৩ মাসের ১৬ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নিজেই আত্মসাৎ করেন।

স্কুলশিক্ষিকার ভাষায়, তার মেয়ের দেবরের সাথে একত্রিত হয়ে ভাড়া আত্মসাৎ শেষে তাকে ভবন থেকে নামাতে পুলিশ কর্মকর্তা নতুন নতুন ছক আটেন এবং তাকে হুমকি-ধামকি প্রদান করে। এতে ভীতিগ্রস্ত নারী বাধ্য হয়ে কোতয়ালি পুলিশে সাধারণ ডায়েরি করাসহ পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ তুলে ধরলেও সেই দফা তেমন কোনো সুফল পাননি। বলা চলে ক্ষমতাধর এসআই রিয়াজের প্রভাবের কারণে বিষয়টি আর বেশিদুর আগায়নি।

নারীর অভিযোগ, বিতর্কিত এসআই রিয়াজের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছাড়াতে বলা হলেও তিনি জোরপুর্বক দখলে রাখাসহ হয়রানি করতে থাকেন। এমনকি সে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় তার সংযোগ ওজোপাডিকো বিচ্ছিন্ন করে দিলে পার্শ্ববর্তী একটি মিটার থেকে জোরপুর্বক সংযোগ নেয়। এই বিষয়টির প্রতিবাদ করায় সে সময়ও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। সর্বশেষ প্রভাব খাটিয়ে নতুন একটি মিটার লাগিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এতে সহযোগিতা দেয় মেয়ের দেবর আবুল কালাম আজাদ।

অভিযোগে জানা যায়, ভাড়ি ভাড়া প্রদান না করায় এসআই রিয়াজ উদ্দিনকে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর একটি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে উপরন্ত পুলিশ কর্মকর্তা নারীকে চাপের মুখে ফেলে দেয়।

বাসা মালিক মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, একদিকে বাসা দখলে রেখে, অন্যদিকে তার বিদেশে থাকা মেয়ে জামাইকে নানান নেতিবাচক খবর পৌছে দিয়ে পরিবারে ভাঙন ধরিয়েছে। এখন তার মেয়ের সাথে স্বামীর সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন। এছাড়া নানানভাবে হয়রানি করছে।

অভিযোগে এমন ফিরিস্তি তুলে ধরে স্কুলশিক্ষিকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খানের কাছে সুবিচার চেয়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগের মধ্যে আরেক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর খবর নেহাত অস্বস্তিদায়ক, মন্তব্য পাওয়া গেছে। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা এই অভিযোগসমূহ অস্বীকার করলেও উর্ধ্বতন কর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অবশ্য ইতিপূর্বে মাঠপুলিশের কর্মকর্তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কোনো প্রকার ছাড় না পাওয়ায় এবারে এসআই রিয়াজও অভিযোগ থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না বলে অনুমান করা হচ্ছে। কারণ স্বচ্ছ ও সৎ মানসিকতার পুলিশ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খান কর্মক্ষেত্রে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সদস্যের অপরাধ প্রশ্রয় দেননি বা এই ধরনের কোনো উদাহরণও নেই।

সম্প্রতি পুলিশের নির্যাতনে শিক্ষানবিশ আইনীজীবীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও নড়েচড়ে বসেন এবং মাঠপুলিশকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নেন। ফলশ্রুতিতে পুলিশ সদস্যদের গণবদলিসহ ইতিবাচক পদক্ষেপ রেখে প্রসংশা কুড়ান। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে, এসআই রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে উত্থ্যাপিত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তির খড়গ
তার মাথায় পড়তে পারে।

এদিকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আইনজীবী মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিনকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। যদিও এর মধ্যেই প্রকাশ হয়ে গেছে, সেই আইনজীবী নির্যাতনে নয়, মারা গেছেন নেশায় আসক্ত হয়ে।’