ভোলার মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারও নেই, চিকিৎসার সরঞ্জামও নেই!

শেয়ার করুনঃ

ভোলা প্রতিনিধি :: প্রায় দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে ঠিকই কিন্তু নেই ডাক্তার ও চিকিৎসার সরঞ্জাম। ভোলার মনপুরা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৪ জন। ফলে সুচিকিৎসা থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত মনপুরার সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার মেঘনা নদীর বুকে অবস্থিত বিছিন্ন মনপুরা উপজেলা। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ বসবাস করছেন। উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১৯৮৬ সালের দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপিত হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের ২১টি পদ ও নার্সের ২০টি পদ থাকলেও বর্তমানে ৪ জন ডাক্তার ও ১১ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য নেই প্রায়োজনীয় সরঞ্জাম। ফলে প্রতিদিনই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে ভোলা সদর হাসপাতালে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ না থাকায় নৌ রুটে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করে ট্রলার ও স্পিডবোট রির্জাভ করে যেতে হয় তাদের। অনেক সময় নদীর মাঝেই মারা যান রোগী।

মনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ওই উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ঈমাম হোসেন বলেন, ট্রলারের ইঞ্জিনের কাজ করতে গিয়ে আমার হাতে চোট লাগে। পরে আমি মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ড্রেসিং করার জন্য সকালে এসে প্রায় ২/৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনো ডাক্তার ও নার্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে ফার্মেসিতে গিয়ে ড্রেসিং করি।

একই উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. হারিছ মিয়া জানান, তিনি গত ৩ দিন ধরে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শরীর ও মাথাব্যথা নিয়ে ভর্তি। তিন দিনের মধ্যে একদিনই রাতে একজন ডাক্তার এসে তাকে দেখেন। এরপর হাসপাতালের বেডে থাকলেও আর কোনো ডাক্তার তাকে দেখতে আসেনি।

কহিনুর বেগম জানান, তার ১০ মাসের সন্তানের ডায়রিয়া হয়েছে। এজন্য তিনি মনপুরা উপজেলার কলাতলির চর থেকে মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ২৪ ঘণ্টা ভর্তি থাকলেও কোনো ডাক্তার এসে তার সন্তানকে দেখেনি। ভর্তি হওয়ার সময় জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক দেখেছেন। এরপর নার্সই চিকিৎসা দিচ্ছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়োজনীয় ডাক্তার নেই। রোগ পরীক্ষা করার জন্য নেই সরঞ্জামও। যার কারণে এখানকার চিকিৎসকরা জরুরি রোগীদের ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ৪/৫ হাজার টাকায় ট্রলার বা স্পিডবোট রির্জাভ করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই।

তিনি আরও জানান, মনপুরা উপজেলার বেশিরভাগ মানুষই জেলে পেশার সাথে জড়িত। তাই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন ভালো না। এ কারণে অনেকের পক্ষে ভোলা সদর বা বরিশাল হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ভোলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম ডাক্তার ও নার্স এবং চিকিৎসা সরঞ্জমের সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, দ্রুত মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক নিয়োগ ও সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।