কুয়াকাটায় সাংবাদিক জিয়া শাহীনের পরিবারের উপর কাউন্সিলর জাকির মোল্লার হামলা

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: কুয়াকাটা বীচের ভ্রাম্যমান হোটেলে তুচ্ছ ঘটনার জেরে বরিশাল নগরীর ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির মোল্লা ও তার পরিবারের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য, জাতীয় দৈনিক মানব জমিনের ষ্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক জিয়া শাহীনের পরিবার। গুরুতর আহত হয়েছেন দুই পুত্র। এদের হামলায় রক্ষা পায়নি তার স্ত্রী ও দুই পুত্রবধুও। ছোট ছেলে ও স্ত্রীকে ঐ রাতে কুয়াকাটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ছোট ছেলে সিফাতের দ্রুত অপারেশনের সিদ্দান্ত নিয়েছেন চিকৎসক। অপর দিকে বড় পুত্র অনিক এবং তার স্ত্রী, সিফাতের স্ত্রী আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে জঘন্য এ ঘটনায় কুয়াকাটা পুলিশের ভূমিকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ঘটনার দিন রাতেই জিয়া শাহীনের পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং দ্রুত সমাধনের আশ্বাস দেন।

সাংবাদিক জিয়া শাহীন জানান, সোমবার তিনি তার স্ত্রী, দুই পুত্র ও পুত্র বধুদের নিয়ে কুয়াকাটা যান। সন্ধ্যায় সবাইকে নিয়ে সাগরপাড়ে মাছ ফ্রাই এর অর্ডার করেন। বিক্রেতা তাদের সামনে রাখা বেঞ্চে বসে অপক্ষো করতে বলেন। আমার পরিবার বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন, আর ২ বছরের নাতনী নিয়ে আমি দাড়িয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রমহিলা এসে তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তার সাথে আসা তার স্বামী তেড়ে আসেন। এ নিয়ে বাক বিতন্ডার সময় ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির মোল্লা হাজির হন। তিনি আমাকে চেনেন দাবি করে কুশল বিনিময় করেন। উত্তেজিত মহিলা ও তার স্বামী তার বোন ও ভগ্নিপতি বলে তিনি পরিচয় দেন। তখন আমি তাকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনার আত্মীয়দের আপনি শান্ত করেন। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন। এতে আমি নাতনী কোলে নিয়ে একটু পিছনে চলে এসে তাকে ভিতরে যাবার জায়গা করে দেই। কিন্তু তিনি জটলার মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই আমার পরিবারের উপর হামলা শুরু হয়। ঘুষি এবং লাথি মেরে আমার দুই ছেলে ও স্ত্রীকে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। আমার দুই পুত্রবধু তাদের স্বামীকে বাঁচাতে তাদের গায়ে শুয়ে পড়ে আকড়ে ধরলে তাদেরও লাথি মেরে সরিয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সেক্রটারীসহ দ্রুত কয়েকজন এসে আমাদের উদ্ধার করেন। পুলিশ এসে আমাদের পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। প্রেসক্লাবের কয়েক ভাই আমার ছোট ছেলে সিফাত ও আমার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। সে সময়ে পুলিশ বক্সের অবস্থানরত পুলিশ এবং কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাছিরউদ্দিন বিপ্লব বরংবার বিষয়টি সমঝোতার প্রস্তাব দেন। আমার স্ত্রী, পুত্র হাসপাতালে, এ অবস্থায় আমি সমঝোতার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করি। বিষয়টি আমি বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনসহ সিনিয়র কয়েক সাংবাদিককে জানাই। এদিকে পুলিশ বক্সে এসে হাজির হন সাবেক পৌর মেয়র বারেক মোল্লা। তিনিও স্পষ্ট বলেন , সমঝোতা করতে হবে। যেহেতু দুই পক্ষই বরিশালের। শেষে কাউন্সিলর জাকির মোল্লার ভাই মামুন, কাউন্সিলরের ছেলে ক্ষমা চাইলে আমি বের হয়ে আসি। রাতেই আমার ছোট ছেলেকে বরিশাল নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও সে রাতে যানবহন সংকট ও নানা সীমাবদ্ধতায় আমার পক্ষে আহত সবাইকে নিয়ে বরিশালে আসা সম্ভব হয়নি। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাসে রওনা দিয়ে দুপুরে বরিশাল পৌঁছি। এরপরই ছোট ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। পরীক্ষা নীরিক্ষার পর জানানো হয় তার নাকের হাড় ভেঙ্গে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অপারেশন করতে হবে। এখনও আমার বড় পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি। বড় ছেলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। স্ত্রীর মাথায় একাধিক ঘুষির চিহ্ন রয়েছে, তার পায়ের আঙ্গুল মচকে গিয়েছে।

জিয়া শাহীন আরও জানান, রাতে বরিশালে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিককে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছে, তারা পরে কেউই আমার কোন খবর নেয়নি। তবে অন্য মারফত ঘটনাটি জেনে বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ রাত ২টায় আমাকে ফোন করেন। তিনি ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানান, এবং আশু সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে জিয়া শাহীন তার বিষয়টি নিয়ে সহকর্মীদের নির্লিপ্তাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছেন। আর মেয়র যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতেই তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাংবাদিক পরিচয় জেনেই তার পরিবারের উপর হামলা করা হয়েছে। এটি তার পরিবারকে পেটানো হয়নি, আমাদের পিটিয়ে বরিশালের সাংবাদিকদের জন্যও হুমকি দিয়ে রেখেছেন কাউন্সিলর জাকির মোল্লা। যিনি আমার স্ত্রী ও পুত্রবধুকেও ছাড়েন নি। পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন।