ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ৬ করোনা রোগীর চিকিৎসায় খরচ ৮ লাখ টাকা!

শেয়ার করুনঃ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মাত্র ৬ জন রোগীর চিকিৎসায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। মার্চ ২০২০ থেকে জুন পর্যন্ত এ খরচ দেখানো হয়। এ বরাদ্দের আনুসাঙ্গিক খাতেই খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আর করোনা চিকিৎসায় জড়িতদের হোটেল ভাড়া, খাবার বিল ও যাতায়াত পায়নি অনেকেই। হাসপাতালের সাবেক সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার নির্দেশে প্রধান সহকারি আঃ মতিন এসব খরচের বিল ভাউচার তৈরী করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি অর্থ বছরে আরো ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

মাস্ক নিয়ে চিকিৎসকদের ক্ষোভ থাকলেও ৩ লাখ টাকার মাস্ক ও জীবানুনাশক ইত্যাদি কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

এদিকে কোভিট -১৯ মহামারি চলাকলে সম্প্রতি সরকারের চিকিৎসা ব্যবস্থ্যা ও স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়মের কথা ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেওয়ায় দপদপিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন মো. টিপু সুলতানকে গত ১৭ জুলাই শোকজ করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজে ১ জুলাই আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সহকারী সার্জন মো. টিপু সুলতান বলেন, এন নাইনটি ফাইফ মাস্ক সরকারের বাজেট থাকলে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়েছে সার্জিক্যাল মাস্ক। যে মাস্ক বিশেজ্ঞদের মতে ৯০-৯৫ পার্সেন্ট ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

তিনি আরও জানান, কোভিট-১৯ চলাকালে চিকিৎসকদের থাকার জন্য হোটেল ভাড়া, খাবার ও যাতায়াত খরচসহ কোন কিছুই তারা পায়নি। এমন সুবিধা কোন চিকিৎসককে দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মার্চ এপ্রিল মাসে করোনার শুরুতে পজেটিভ আক্রান্তদের চিকিৎসা না দিয়ে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে রোগীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানালেও সিভিল সার্জন কোন উদ্যোগ নেয়নি। সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ তখন বলেছেন, আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অনেকেই বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চাওয়ায় তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়না। কিন্তু যখন জুন মাসে করোনার বরাদ্দ টাকা ফেরৎ পাঠানোর নির্দেশনা আসে তখনই লুটপাটের প্রক্রিয়া শুরু করতে ওয়ার্ডটি চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। তাই মে থেকে জুন মাসে পজেটিভ রোগী ভর্তি করে বরাদ্দের ৮ লাখ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনার চিকিৎসা খরচ বাবদ বরাদ্দ পেয়েছে ২০ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বরাদ্দ হতে খরচ দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১২ লাখ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লেখিত সময়ে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় চিকিৎসকসহ ২১ জনের খাবার বাবদ প্রতি জনের ৫০০ টাকা হারে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে। এ হিসাবে ৪২০ দিনের খাবার বিল বাবদ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। ওই সময় কর্মরত নার্সদের অভিযোগ তাদের জন্য খাবার বিলের বরাদ্দ টাকা দেয়া হয়নি।

হাসাপতালের নার্স শাহারুন্নেসা, রেখা রানী, শিপ্রা মালোসহ ৬ জন জানান, প্রধান সহকারি মতিন আমাদের জনপ্রতি ২ হাজার টাকা এবং রিনা মিস্ত্রি, তাছলিমাসহ আরো ৬ জনকে ৪ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দেন। এ টাকা কিসের জানতে চাইলে কোন স্বাক্ষর ছাড়াই মতিন আমাদের টাকা দিয়ে বলেন, করোনা ডিউটির জন্য মানবিক কারনে এটা দেয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, গত মে ও জুন মাসে চিকিৎসকদের ঝালকাঠি থেকে বরিশাল পরিবহন খরচ বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে। যদিও হাসপাতালের সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসকদের আনা নেয়া করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে করোনাকালীন যাতায়াত বাবদ কত টাকা বিল পেয়েছেন জানতে চাইলে চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, ‘মনে নেই’। কিভাবে বরিশাল থেকে আসা যাওয়া করেছেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে’।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক আনোয়ার হোসেন ও মহসীন জানান, বরিশালে থাকা ঝালকাঠির কর্মরত চিকিৎসকদের সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে আনা নেয়া করেছি আমরা কিন্তু কোন পারিশ্রমিক পাইনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উল্লেখিত খাত ছাড়াও ৬ রোগীর চিকিৎসাকালিন সময়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে শুধু আনুসাঙ্গিক খাতেই খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। জীবানুনাশক বিল উত্তোলন করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাতে ৬৬ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের প্রধান সহকারি আব্দুল মতিনের বক্তব্য, ‘গত অর্থ বছরের ২০ লাখের ৮ লাখ টাকা সঠিকভাবেই খরচ হয়েছে। বাকি টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। খরচের খাতে কোন অনিয়ম বা ত্রুটি নেই। খাবার খরচ নিয়ে নার্সদের অভিযোগ সঠিক নয়। চিকিৎসকদের ভাড়া গাড়িতে বরিশাল-ঝালকাঠি আসা যাওয়ার ভাউচার দাখিলের মাধ্যমে খরচের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে’।

সাবেক সিভিল সার্জন শ্যমল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ‘আমি প্রধান সহকারির সাথে কথা না বলে এই খরচ করা বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না বলে তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন’।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির নবাগত সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে গত অর্থ বছরে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। এরমধ্যে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ৩ লাখ টাকার নাকি মাস্ক, জীবানুনাশক ইত্যাদি কেনা হয়েছে। বাকি ৪ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো হয়েছে’।