বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখার বাতাসে নৌকা ডুবির শঙ্কা, আওয়ামী শিবিরে দুশ্চিন্তার ছাপ

শেয়ার করুনঃ

এসএম জাহিদ ::: বরিশালে আওয়ামী লীগের বিভক্তির দ্বন্দ্বে হাতপাখার জোড়ালো বাতাসে নৌকার ভরাডুবির আশংকা তৈরি হয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ইসলামি আন্দোলনের হেভিওয়েট প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামী শিবিরে দুশ্চিন্তার ছাপ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়- নৌকার মনোনয়ন ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। দলের সুবিধা বঞ্চিত নেতাদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে রাজনীতির মাঠে। এর আগে ২০১৮ সালে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে একরকম কোনঠাসা হয়েছিল প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী এ সকল নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয় তো দূরের কথা রাস্তা ঘাটেও জায়গা হতো না এ সকল নেতাকর্মীদের। অনেকটা নিজস্ব আয়ত্তে রেখেই রাজনীতি করছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ। দলের প্রবীণ নেতা কর্মীদেরকেও জায়গা দেননি তার দরবারে। যে কারণেই ২০২৩ সালে এসে সাদিক আব্দুল্লাহর নৌকা খোকন সেরনিয়াবাতের ঘাটে নোঙর করায় অনেকটা খুশির আমেজে রাজনীতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের সুবিধা বঞ্চিত এ সকল নেতাকর্মীরা। আর এতেই সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তির। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের সম্মান জানিয়ে নৌকা প্রার্থীর হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। কিন্তু সাদিক অনুসারী নেতাকর্মীদেরকে স্থান দিচ্ছেন না নৌকার নতুন মাঝি আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও রাখেননি সাদিক পন্থী কোন নেতাকে।

আরও জানা যায়- বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিলেও তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করেননি আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। এখান থেকেই দলের ভিতরে বিভক্তির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে যা এখন চাচা- ভাতিজার দ্বন্দ্ব নামকরণের মাধ্যমে টক অব দা টাউনে পরিনত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় তা ভালো চোখে দেখছেন না দলের প্রবীণ রাজনৈতিকরা। দলের বৃহত্তম একটি অংশকে বঞ্চিত করে নির্বাচনে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন ব্যাহত হওয়ার কথাও জানান কেউ কেউ। উদাহরণ স্বরূপ ২০১৩ সালে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের হারের বিষয়টি উল্লেখ করে জানান সে সময়েও দলের বৃহত্তম একটি অংশকে বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

এদিকে বিভক্তির দূর্বলতাকে পুঁজি করে নৌকা ডুবাতে বেশ জোড়ালো বাতাস দিতে শুরু করেছে হাতপাখা। দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীমকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকেই নীরবে নৌকাকে পরাজিত করতে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীরা। এমনকি প্রার্থীকে বরণ করার পাশাপাশি নগরীতে আলোড়ন সৃষ্টির লক্ষ্যে সহস্রাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজনে ব্যস্ত দলটির নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বশীলরা। সোমবার ৮ মে গড়িয়ার পারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে স্বাগত জানানো হবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে। এ অভ্যার্থনা শোভাযাত্রায় দুই সহস্রাধিক মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুব আন্দোলনের নেতা মুফতি সানাউল্লাহ।

অন্যদিকে মুফতি ফয়জুল করীম সিটি নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হওয়ায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে নৌকার নেতাকর্মীদের মাঝে। কানাঘুষা গুঞ্জন চলছে নগরীর অলিতে গলিতে। যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেইসবুক) দেয়া পোস্ট ও কমেন্টে। অনেকেই আবার মুফতি ফয়জুল করীমের মনোনয়ন পাওয়াকে নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসাবে আখ্যা দিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে এ সকল কুরুচিপূর্ন মন্তব্যের কোন প্রভাবই পরেনি ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মাঝে। আওয়ামী নেতাকর্মীদের করা সমালোচনার জবাব ভোটের মাঠে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ দলটির মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।

এ বিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় মিডিয়া মুখপাত্র কে এম শরীতুল্লাহ বলেন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম গণমানুষের নেতা। তাকে নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করে তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। সাধারণ মানুষ হাতপাখায় ভোট দিতে প্রস্তুত। ৮ তারিখে তার নমুনা দেখবে বরিশাল সিটির বাসিন্দারা।

এদিকে নগর বিশ্লেষকদের মতে- বিএনপি-জামাত জোট ও বাসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় নৌকার উপরে জোড়ালো গরম বাতাস দিতে শুরু করেছে হাতপাখা। তাদের মতে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি পরিবর্তনের দারুণ সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে ইসলামি আন্দোলনের হেভিওয়েট প্রার্থীর মাধ্যমে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বকে পুঁজি বানিয়ে হাতপাখার জয়লাভের সম্মুখ সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

উল্লেখ্য- ১২ ই জুন আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন নগরপিতাকে বেছে নিবেন বরিশাল সিটির বাসিন্দারা।