পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::: আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভে ৪৩ বছরের আওয়ামী রাজনীতি থেকে ইস্তফার ঘোষণা দিলেন পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা।
শনিবার (১৭ জুন) সকালে তার গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের সামনে আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় পদ-পদবি থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতি থেকে ইস্তফার ঘোষণা দেন।
লিখিত বক্তব্যে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামী লীগে হামলা, মামলা, জেল-জুলুম নির্যাতন ভোগের কোনো মূল্যায়ন নেই। নব্য-হাইব্রিডদের অবৈধ অর্থের কাছে আজ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা অসহায়। আ.লীগের পদ-পদবি যেখানে টাকায় বিক্রি হয়, সেই সংগঠনে আমার মতো নিঃস্বার্থ ত্যাগী কর্মীদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। পদে পদে লাঞ্চনা, বঞ্চনা ও অপমান অপদন্ত হওয়ার চেয়ে আত্মসন্মান বাঁচাতে আগে ভাগেই সরে যাওয়া শ্রেয়। তাই আমি দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষণা করছি। ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য তৃণমূলের প্যানেল তৈরিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী মাঠের জনপ্রিয়তা এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয়নি। অর্থের বিনিময়ে কনিষ্ঠ যুবলীগ নেতার নাম তালিকায় ১ নম্বরে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় ও অসম্মান করা হয়েছে। অত্মসম্মান বোধের কারণেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য ইস্তফা দিয়ে সাধারণ নাগরিক হিসেবে থাকতে চাই।
লেবুখালী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়নবাসী চাইলে অবশ্যই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
এ প্রসঙ্গে দুমকি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌখিকভাবে শুনেছি, এখনও পদত্যাগপত্র আমাদের হাতে পাইনি। এটা হয়ে থাকলে তা খুবই দু:খজনক।
আমরা ইউনিয়ন কমিটির বিশেষ বর্ধিত সভায় সমঝোতার মাধ্যমে প্যানেল তৈরি করে পাঠিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আমার বা কারও কিছু বলার নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, পদত্যাগের কোনো কাগজপত্র পাইনি। মনোনয়নের ব্যাপারে দেলোয়ারের নাম সন্মানের সঙ্গে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সুপারিশপত্র ও দেওয়া হয়েছিল। তিনি মনোনয়ন পাননি। এখানে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।
পদত্যাগ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে তাকে তো আর জোর করার কিছু নেই। মনোনয়ন না পাওয়ায় মনগড়া অভিযোগ করছেন।
উল্লেখ্য, আসন্ন ২নং লেবুখালী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয় বারের মতো দলীয় মনোনয়ন চান উপজেলা আ.লীগের ১নং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা। ২০১৮ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। তৎকালীন দলীয় নেতা-কর্মী, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসে ওই সময় তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে নৌকার প্রার্থী শাহ-আলম আকন চেয়াম্যান নির্বাচিত হন। শাহ-আলম আকনের মৃত্যুর পর এবারে তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম তুহিন দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন।