দুর্নীতির উৎস উদঘাটন করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন : বরিশালে দুদক কমিশনার

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, দুর্নীতি সমাজ ও অর্থনীতির বড় অন্তরায়। আমাদের কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে হলে দুর্নীতি রুখতে হবে। আইন করে দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। আমাদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। লোভ লালসা পরিহার করতে হবে।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

দুদক কমিশনার আরও বলেন, দুর্নীতি কমাতে দুর্নীতির উৎস উদঘাটন করে যেখানে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে, সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সেখানে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলেই দুর্নীতি বাড়বে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। দল-মতকে গুরুত্ব না দিয়ে, কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে দুদক সময়ক্ষেপণ করে না। দুর্নীতি করে কেউ যদি শাস্তি পায়, তা হলে অন্যরা দুর্নীতি করার সাহস দেখাবে না। সবাই ভয়ে থাকবে, যা দুর্নীতি কমানোর জন্য সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিবাজকে ঘৃণা করতে হবে। দুর্নীতিবাজকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। নিজে দুর্নীতি বাদ দিয়ে অপরকে দুর্নীতি বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। দুর্নীতির অজুহাত, কালোহাত রুখে দাঁড়াতে হবে। সততা ও স্বচ্ছতার সাথে সরকারি সেবা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা প্রমাণ করবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য তারা সূর্যসারথী।

মোজাম্মেল হক খান বলেন, বার বার বলা হচ্ছে আইন করে দুর্নীতি দমন করা যাবে না। তাহলে দুর্নীতি যদি একটি রোগ হয়, একটি সংক্রামক ব্যাধি হয় তাহলে এর প্রতিশেধক কোথায় সেই জায়গাগুলোতে আমাদের হাত দিতে হবে। সেই প্রতিশেধক টিকাগুলো হচ্ছে আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, আমাদের লোভ-লালসা থেকে দূরে অবস্থান নিতে হবে। স্বাভাবিক জীবন যাপন ও রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধসহ সবকিছু মিলিয়ে একটি আদর্শ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে যদি এই কাজগুলো করি তাহলে প্রত্যেকেই আমরা প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এ কারণে দুর্নীতি আমাদের আক্রান্ত করতে পারবে না, আমরা সংক্রামিত হবো না।

তিনি বলেন, আমরা উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হবো, বিশ্বকে এরইমধ্যে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি এবং আগামী দিনে আরও দেবো। ২০৪০-৪১ সালে আমাদের অবস্থান পৃথিবীর প্রায় ৩০টি শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে হবে। সেই জায়গায় যেতে হলে দুর্নীতির বর্তমান অবস্থাকে দমন না করলে, রূপকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বা হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তখন হয়তো আমরা উন্নত হবো কিন্তু ভেতরে অনেক ঘুনপোকা থাকবে। আমাদের অনেক অন্তরায় রয়ে যাবে, যেগুলো বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়। কাজেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সামাজিকভাবে দুর্নীতিকে বয়কট করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট যদি না করেন, ঘৃণা করতে না শেখেন তাহলে আপনিও দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানকে কাভার দিতে কত মিডিয়া এসেছে। তার মানে হলো তারা আমাদের সহযোদ্ধা। তারা তাদের কলমের মাধ্যমে যুদ্ধ করছে আর আমরা আমাদের বক্তৃতা ও দাপ্তরিক যে দায়িত্ব পালন করছি সেটার মাধ্যমে কাজ করছি। আমরা সবাইকে নিয়ে দুর্নীতি দমন করতে চাই, কারণ এটি একক কোনো বিষয় নয়।

দুদক কমিশনার বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন এতটাই শক্তিশালী আপনার অবৈধ সম্পদ পৃথিবীর যেখানেই থাকুক আমরা সেই সম্পদ বের করে নিয়ে আসতে পারবো। সেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে, আপনি শুধু অর্জন করেছেন কিন্তু বর্জন আমরা করিয়ে দেবো, ইনশাআল্লাহ।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন, জেলার পুলিশ সুপার ওয়াহেদুল ইসলাম।

গণশুনানিতে বক্তব্য রাখেন দুদকের বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক আবদুল গাফফার, বরিশাল জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি রাবেয়া খাতুন প্রমুখ।