জনসাধারণের জন্য নভেম্বরেই আসতে পারে চীনের ভ্যাকসিন

শেয়ার করুনঃ

অনলাইন ডেস্ক :: করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র ভ্যাকসিনের দিকেই চেয়ে আছে বিশ্বের মানুষ। তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে মানবজাতিকে বাঁচাতে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।

এর মধ্যেই বেশ কিছু দেশের ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও সুখবর দিয়েছে কয়েকটি ভ্যাকসিন।

ভ্যাকসিন উন্নয়নের দৌড়ে পিছিয়ে নেই চীন। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশেই প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর থেকেই এই ভাইরাস প্রতিহত করতে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি চীন দাবি করেছে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনগুলো জনসাধারণের জন্য হয়তো চলতি বছরের নভেম্বরেই চলে আসতে পারে। চীনের সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেন্সনের (সিডিসি) এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে চীনে চারটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এর মধ্যে তিনটি ভ্যাকসিনকে ইতোমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারে জন্য গত জুলাইয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সিডিসির বায়োসেফটির প্রধান বিশেষজ্ঞ গুইঝেন উ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ভালো ভাবেই এসব ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এগুলো নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরেই জনসাধারণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে এসব ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অস্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। গত এপ্রিলে তিনি নিজেও ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন। তবে তিনি তার দেহে করোনার সম্ভাব্য কোন ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেছেন তা উল্লেখ করেননি।

এদিকে, সম্প্রতি চীনের শীর্ষ মেডিক্যাল কর্মকর্তা গ্যাও ফু বলেছেন, চীনে প্রত্যেকের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে না। এর পরিবর্তে করোনা মহামারিতে যারা সম্মুখসারিতে থেকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং উচ্চ-ঝুঁকিতে আছেন; ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।

সিডিসির এই পরিচালক বলেন, উহানে কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউ দেখা দেয়ার পর চীন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার এর প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের এই ভারসাম্যপূর্ণ নীতিতে ঝুঁকি এবং সুবিধা বিবেচনা করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে আরেকটি গুরুতর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় এখনও নেতৃত্বের আসনে রয়েছে চীন। বিশ্বে ভ্যাকসিনের সর্ববৃহৎ উৎপাদনকারী এবং গ্রাহক এই দেশটি বছরে এক বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারে। চীনে ভ্যাকসিনের ৪০টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৩০টিরও বেশি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষায় রয়েছে, যার ৯টিই চীনের; এই সংখ্যা বিশ্বের একক কোনও দেশের সর্বোচ্চ। বেইজিংয়ের চারটি ভ্যাকসিন শেষ ধাপের ট্রায়ালে পৌঁছেছে। এর যেকোনও একটি ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হলে তা বিশ্বের কাছে সরবরাহ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

চীনের মূল ভূখণ্ডের গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করোনাভাইরাসের নাকে স্প্রে ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়।

চীন ইতোমধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল আসার আগেই নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রয়োগ শুরু করেছে। গত জুনের শেষের দিকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।

এছাড়া জুলাই থেকে উচ্চ-ঝূঁকিতে থাকা দেশটির মেডিক্যাল কর্মী এবং সীমান্তরক্ষীদের জন্য আরেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়। তবে এসব ভ্যাকসিনের কোনোটিই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা এখনও শেষ করতে পারেনি।