ভারতীয় জেলেরা নিয়ে যাচ্ছে ট্রলার ভর্তি ইলিশ, খালি হাতে ফিরছে বাংলাদেশীরা

শেয়ার করুনঃ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বঙ্গোপসাগরে পাশাপাশি স্থানে মাছ ধরছেন বাংলাদেশ ও ভারতীয় জেলেরা। ভারতীয়রা ইলিশভর্তি ট্রলার নিয়ে গেলেও দেশি জেলেরা ফিরছেন খালি হাতে ফিরছেন। কারণ হিসেবে- মাছ শিকারে প্রশিক্ষণের অভাব ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকার কথা জানান ছেলেরা। বিষয়টি স্বীকার করে পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন- সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ থাকলেও আমাদের জেলেরা মাছ ধরার সঠিক কৌশল না জানার কারণে তারা শূন্যহাতে ফিরে আসছেন।

বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে শত শত ট্রলার নোঙর করা, কিন্তু আড়তে ইলিশ নেই।

ট্রলার মালিক আবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় লাখ টাকার বাজার-সদাই করে ট্রলারটি সাগরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু যে মাছ পেয়েছি, তা বিক্রি করেছি মাত্র ৩০ হাজার টাকা। তিনি জানান, কয়েক ট্রিপ ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলার মালিকদের। চলতি বছর ইলিশ মৌসুম শুরুর পর গত দুই সপ্তাহ আগে কিছু মাছ জালে ধরা পড়লেও বর্তমানে ইলিশের খোঁজ মিলছে না। তার মধ্যে ইলিশ প্রজননের জন্য সামনে ২২ দিনের অবরোধ আসছে। সব মিলিয়ে ভালো নেই মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

একাধিক মৎস্যজীবী বলছেন, ভারতীয় ট্রলার থেকে একবার জাল ফেলে এক দিনে যে মাছ আহরণ করেন তা আমাদের ধরতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রবীণ জেলে আব্দুল মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয়দের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। তারা সেগুলো দিয়ে মাছের গতিবিধি ও পরিমাণ নির্ণয় করে মাছ ধরতে পারেন। তাই অল্প দিনে অনেক বেশি মাছ পান, এতে ভারতের মৎস্য খাতে উন্নয়ন বেশি। তারা মাছ শিকারের কৌশলও জানেন বটে।’

পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের জেলে পল্লীর কালু মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, এখন আর আগের মতো মাছ নেই। আগে যেখানে ২/৪ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে গিয়ে মাছ ধরতাম। এখন সেই মাছ ধরতে ১৮/২০ ঘণ্টা চালিয়ে নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে সাগরের গভীরে যেতে হয়। এতে মালিকের খরচ যেমন বেশি, তেমনি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারায় মাঝি মাল্লাদের জীবনের ঝুঁকিও থাকে বেশি।

স্থানীয় জেলে ও মৎস্যজীবী নেতারা আরও জানান, বাংলাদেশি জেলেদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। মান্ধাতার আমল থেকে এখনও তারা গভীর সমুদ্রে মাছের অবস্থান নির্ণয় করেন পানি রঙ ও স্রোত দেখে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় তাদের নেই জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত সরঞ্জামও। আধুনিকায়ন বা প্রশিক্ষণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। তাদের দাবি, মৎস্য বিজ্ঞানী ও মৎস্য কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য ও সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশি জেলেদের।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, দেশের বিশাল সমুদ্রসীমায় রয়েছে ব্যাপক মৎস্যসম্পদ। কিন্তু সেটা আহরণে জেলেদের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই, তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই। তিনি মনে করেন, সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে মাছ ধরার আধুনিক সরঞ্জাম জেলেদের দেওয়া হলে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ বাড়বে কয়েকগুণ।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, মৎস্য ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। অতি শীঘ্রই জেলেদের মাছ ধরার কৌশল ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা রয়েছে মৎস্য বিভাগের।’